প্রথম ইনিংসের ঘাটতি ১০৭ রান, ব্যাটিংয়ে নামার পরপরই নেই দুই উইকেট। নিষ্প্রাণ চার দিনের পর এই ম্যাচও হারতে পারে বাংলাদেশ! শঙ্কার যে চোরাস্রোত খানিকটা বইতে শুরু করেছিল, তা থামিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। দ্যুতিময় ব্যাটিংয়ের ঝলকানিতে দলকে এগিয়ে নিলেন অভিজ্ঞ ওপেনার।
পাল্লেকেলে টেস্টের পঞ্চম দিনের চা বিরতিতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১০০। লঙ্কানদের চেয়ে এখন পিছিয়ে তারা কেবল ৭ রানে। ম্যাচের বাকি আর ৩৫ ওভার। তবে শেষ ঘণ্টায় চাইলে সম্মতিতে ড্র মেনে নিতে পারে দুই দল।
প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে উইকেট বিলিয়ে আসা তামিম এবার অপরাজিত ৭৪ রানে। ৯৮ বলের নান্দনিক ইনিংসে ১০ চারের সঙ্গে শোভা তিন ছক্কার। অধিনায়ক মুমিনুল হক তার সঙ্গী ২৩ রান নিয়ে। তামিম যখন ফিফটি স্পর্শ করেন, দলের রান তখন ৫২। দলের ইনিংস এতটাই তামিমময়।
ম্যাচের শেষ দিনে রোববার সকালের সেশনে ছিল রান আর উইকেটের মেলা। উইকেটশূন্য চতুর্থ দিনের পর এ দিন এক সেশনে বাংলাদেশ তুলে নেয় পাঁচ উইকেট, শ্রীলঙ্কা রান তোলে ওভারপ্রতি প্রায় পাঁচ করে।
১৫৪ রানে দিন শুরু করা ধনাঞ্জয়াকে ১৬৬ রানে বিদায় করেন তাসকিন। করুনারত্নের সঙ্গে তার বিশাল জুটি থামে ৩৪৫ রানে। তাসকিন নিজের পরের ওভারে করুনারত্নেকে ফেরান ২৪৪ রানে। লাঞ্চের সময় শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করে ৮ উইকেটে ৬৪৮ রানে, ১০৭ রানে এগিয়ে থেকে।
নতুন বলে জোড়া উইকেটে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন সুরাঙ্গা লাকমল। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।নতুন বলে জোড়া উইকেটে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন সুরাঙ্গা লাকমল। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।তামিমের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভালোই। সুরাঙ্গা লাকমলের প্রথম দুই ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। চতুর্থ ওভারে ধনাঞ্জয়ার অফ স্পিন আক্রমণে আনে শ্রীলঙ্কা। তামিম পাল্টা আক্রমণ করেন প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা, তৃতীয় বলে চারে।
কিন্তু ছোট্ট মড়ক লাগে অন্য প্রান্তে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানের পর এবার সিঙ্গেল নিয়ে রানের দেখা পান সাইফ হাসান। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লাকমলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আউট তিনি বাজেভাবে খোঁচা দিয়ে।
লাকমলের পরের ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের পর এবার তার প্রাপ্তি শূন্য।
২৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে হঠাৎই তখন চাপে বাংলাদেশ। ধনাঞ্জয়ার পরের ওভারেও ক্রিজ ছেড়ে ছক্কা মারেন তামিম। তবে জোড়া ধাক্কার পর গুটিয়ে নেন নিজেকে। মুমিনুল হকও ধীরস্থির ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন।
এর মধ্যে খানিকটা নাটক হয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে। ধনাঞ্জয়ার বলে তামিমের ড্রাইভ সিলি পয়েন্টে ওশাদা ফার্নান্দোর বুটে লেগে ক্যাচ হয়ছে বলে আবেদন করে শ্রীলঙ্কা। মাঠের আম্পায়ার ‘সফট সিগনাল’ আউট দিয়ে সিদ্ধান্ত পাঠান তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে। তিনি লম্বা সময় নানা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে সিদ্ধান্ত নেন ‘নট আউট।’
জুটি একটু থিতু হওয়ার পর আবারও দারুণ গতিতে ছুটতে থাকেন তামিম। বিশ্ব ফার্নান্দোর এক ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন ৫৬ বলে। টেস্টে যেটি তার ৩০তম অর্ধশতক।
ফিফটির পরও এগোতে থাকেন একই গতিতে। ধনাঞ্জয়াকে টানা দুটি বাউন্ডারির পরের ওভারে ছক্কা মারেন আরেকটি। পরে চা বিরতির আগে আবার সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করে দেন।
মুমিনুলের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৭৩। উইকেটে শেষ দিনেও বোলারদের জন্য নেই তেমন সহায়তা। চোটের কারণে বোলিং করতে পারছেন না ফাস্ট বোলার লাহিরু কুমারা, শ্রীলঙ্কার বোলিং শক্তি কমে গেছে এতেও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (চা পর্যন্ত)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৪১/৭ (ডি.)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৭৯ ওভারে ৬৪৮/৮ (ডি.) (আগের দিন ৫১২/৩) (করুনারত্নে ২৪৪, ধনাঞ্জয়া ১৬৬, নিসানকা ১২, ডিকভেলা ৩১, হাসারাঙ্গা ৪৩, লাকমল ২২*, বিশ্ব ০*; আবু জায়েদ ১৯-২-৭৬-০, তাসকিন ৩০-৬-১১২-৩, ইবাদত ২১-১-৯৯-১, মিরাজ ৫৮-৬-১৬১-১, তাইজুল ৪৫-৯-১৬৪-২, মুমিনুল ৪-০-১৮-০, সাইফ ২-০-৫-০)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৩৩ ওভারে ১০০/২ ( তামিম ৭৪*, সাইফ ১, শান্ত ০, মুমিনুল ২৩*, লাকমল ৮-২-২১-২, বিশ্ব ৫-২-১৮-০, ধনাঞ্জয়া ১১-১-৪৬-০, হাসারাঙ্গা ৯-০-১৫-০)।