সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে সরকারের কোটিকোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন গরু, ঘোড়া, কয়লা, চিনি, সুপারী ও পেয়াজসহ মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর করছে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীরা।
তাদের নেতৃত্বে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করতে গিয়ে ঘটছে মৃত্যুসহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- আজ সোমবার (২০শে মে) সকাল ৬টা জেলার তাহিরপুর উপজেলার
চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচাঁর করে ৮-১০টি মোটর সাইকেল দিয়ে পাশের টেকেরঘাট সীমান্তের বড়ছড়া শুল্কস্টেশন সংলগ্ন জয়বাংলা বাজারের কাঠের ব্রিজের কাছে নিয়ে মজুত করা
শুরু করে সোর্স আক্কল আলী, তার ছেলে রুবেল ও জামাল মিয়াগং। এখবর পেয়ে বেলা ১১টায় টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের ভিআইপি হাফিজ অভিযান চালিয়ে ৩ বস্তা অবৈধ কয়লাসহ ১টি মোটর সাইকেল আটক
করে। অন্যদিকে একই সময়ে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত ফারুকের ডিপুতে প্রায় ১শ মেঃটন অবৈধ কয়লা মজুত করে ওপেন বিক্রি করে সোর্স পরিচয়ধারী রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, রিপন মিয়া, লেংড়া জামাল, সাইফুল মিয়া, বাবুল মিয়াগং।
এছাড়াও পাশের বজলু মুন্সির ডিপু, মিজানের ডিপু, খসরু চেয়ারম্যানের ডিপু, আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িসহ আরো একাধিক ডিপু ও বসতবাড়িতে প্রায় ১হাজার অবৈধ কয়লা মজুত রেখে গত ৩দিনে গডফাদার তোতলা আজাদ তার সোর্স বাহিনী নিয়ে বিক্রি করেছে।
এদিকে ওই গডফাদারের নেতৃত্বে চাঁনপুর, বালিয়াঘাট, বীরেন্দ্রনগর ও লাউড়গড় এলাকা দিয়ে একই ভাবে কয়লা, পাথর, চিনি, ইয়াবা, মদ, গাঁজা, গরু ও নাসির উদ্দিন বিড়িসহ কোটিকোটি টাকার মালামাল অবৈধ
ভাবে ভারত থেকে পাচাঁর করা হয়ে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা পাচাঁরকৃত ১টন চোরাই কয়লা থেকে বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ৮শত টাকা, থানা ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে ১হাজার টাকাসহ মোট ২হাজার ৩শত টাকা
চাঁদা উত্তোলন করে। আর ১ বস্তা পেয়াজ থেকে ১শ টাকা, ১বস্তা চিনি ১টাকা, ১টি গরু থেকে ৭হাজার টাকা, ১টি ঘোড়া থেকে ৮হাজার টাকা চাঁদা নেওয়াসহ মাদকদ্রব্য ও নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করার জন্য মাসিক ৫০হাজার থেকে ৩লাখ টাকার পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডলুড়া এলাকা দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে চোরাকারবারীরা। তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবাধে পেয়াজ, চিনি, গরু ও মাদকদ্রব্য প্রতিদিন পাচাঁর করছে। একই ভাবে মধ্যনগর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান হচ্ছে।
তবে গত শনিবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৩ পুরিয়া গাঁজা ও ৮৫ পিছ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আক্কাস মিয়া (৩৫), মুসাদ উল্লাহ মোশারফ (৩০) ও রাব্বানী মিয়া (৩৩)
কে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। কিন্তু তাহিরপুর সীমান্ত চোরাকারবারীদের গডফাদার ও তার সোর্সরা চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে গত ৩ বছরে কোটিপতি হয়েগেলেও নেয়া হয়না আইনগত কোন পদক্ষেপ।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ভিআইপি শামিম বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে ক্যাম্প কমান্ডারের সাথে কথা বলেন, এবিষয়ে আমার কিছু করার নাই। ওই ক্যাম্পের
কমান্ডার নায়েক সুবেদার জাফর বলেন- সীমান্ত দিয়ে যখন কয়লাসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করা হয় জানাবেন, তখন আমি পদক্ষেপ নেব। দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান জানান- বিজিবির হাতে গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান চলছে। তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- সীমান্ত চোরাচালান বন্ধের দায়িত্ব বিজিবির। আপনি এব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলেন, থানা-পুলিশে কোন সোর্স নাই। আমাদের নামে কেউ চাঁদা উত্তোলন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া–সুনামগঞ্জ