মেহেরপুরের গাংনী বাসস্ট্যান্ড একটি ব্যস্ততম স্থান। শহরের প্রাণকেন্দ্রের এ স্থানটিতে মানুষের ভিড়। পছন্দের তরমুজ হাতে নিয়ে ওজনের অপেক্ষা করছেন অনেকে। এক কোণে দাঁড়িয়ে মাপ দিয়ে তরমুজের টাকা বুঝে নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তরমুজ কেনাকাটা নিশ্চিতে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক। বিরাট এ কর্মযজ্ঞের নেতৃত্বে রয়েছেন গাংনী পৌরসভার মেয়র আহম্মেদ আলী।
পৌর মেয়র কি তরমুজ ব্যবসায়ী? এমন প্রশ্ন পাঠকের মনে আসতেই পারে। হ্যাঁ সাধারণ মানুষ যাতে সহনীয় মূল্যে তরমুজ ক্রয় করতে পারেন সেজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে তরমুজ বিক্রির এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন পৌর মেয়র। বাজারের তরমুজের অগ্নিমূল্যের হাত থেকে ক্রেতা সাধারণকে রক্ষা করতে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রেতারা।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ আমদানি করা হয় মেহেরপুর জেলায়। এখানকার ব্যবসায়ীরা গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে তরমুজ আমদানি করে বিক্রি করছেন চড়া মূল্যে। পিস হিসেবে তরমুজ কিনে আনা হলেও গাংনী বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয়েছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে। এ নিয়ে গেল কয়েকদিন ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা ও অভিযোগ ছিল।
বিষয়টি আমলে নিয়ে রোববার (২৫ এপ্রিল) গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী পৌর পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বাজার মনিটরিং করেন। এসময় তরমুজ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে কেনাবেচার দরের মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করেন তিনি। সহনীয় পর্যায়ে দর রাখাতে অনুরোধ করেন মেয়র। তবে তরমুজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মেয়রের এ অনুরোধ বর্জন করে তরমুজ বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেন। এতে বিপাকে পড়েন মেয়র আহম্মেদ আলী। বিক্রেতাদের সাথে নানাভাবে আলোচনা করে তাদেরকে রাজি করতে না পেরে পৌরসভার পক্ষ থেকে তরমুজ আমদানি করে বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী বলেন, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তরমুজ বিক্রির ফলে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠে। তাই ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে পৌরসভার পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যতদিন ক্রেতাদের চাহিদা থাকবে ততদিন সহনীয় মূল্যে তরমুজ সরবরাহ করা হবে।
জানা গেছে, গাংনী পৌরসভার তরমুজ বাজারে মাইকিং করে প্রচারণার মাধ্যমে ৩০-৪০ টাকা দরে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। তরমুজের আকার ভেদে দামের এ তারতম্য। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ ট্রাক তরমুজ বিক্রি করেছে পৌরসভা।
তরমুজ ক্রেতার গাংনীর চৌগাছার আব্দুল বারি ও চেংগাড়া গ্রামের সাহানা খাতুন বলেন, এতো দর ছিল যে তরমুজ কিনতে পারছিলাম না। বাচ্চারা কান্নাকাটি করলেও অভিভাবকদের কিছুই করার ছিল না। পৌরসভার দোকান থেকে কম দামে কিনতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা।
গাংনীর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল কাদের বলেন, রোজাদারদের প্রিয় খাবার তরমুজ সহনীয় দরে বিক্রি করা পৌর মেয়রের উদার ও সেবামূলক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এ কার্যক্রম চালু রাখার দাবি করেন তিনি।
পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার কয়েকজন কর্মচারী, কাউন্সিলর ও স্থানীয় কিছু যুবক স্বেচ্ছা শ্রমের মধ্য দিয়ে তরমুজ বিক্রি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ক্রেতাদের স্বস্তির কথা মাথায় নিয়ে এ সেবা দিচ্ছেন তারা।
এ ধরনের উদ্যোগকে শুভ উদ্যোগ আখ্যায়িত করে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মেহেরপুর জেলা শাখা সভাপতি রফিকুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল হক মানিক বলেন, ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ বিবচেনায় মেয়র আহম্মেদ আলীর মতো এ উদ্যোগ সারা দেশের জনপ্রতিনিধিরা যদি গ্রহণ করতেন তাহলে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা হবে।