সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয় কমিশনের পুরো প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গেও কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন।
ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’।
বিকাল তিনটায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়েছে। এটি কমিশনের প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), নাগরিক ঐক্য, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন।
আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারির নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক কমিটিও এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দলে রয়েছেন জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আছেন নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মশিউল আলম।
ইসলামী আন্দোলনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
খেলাফতে মজলিশের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আমীরে মজলিশ মাওলানা আবদুল বাছিদ আজাদ ও মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে ঐকমত্য কমিশন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয় কমিশনের পুরো প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গেও কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কথার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার দ্রুত করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ প্রণয়ন করবে সরকার। এ জাতীয় সনদের ভিত্তিতে হবে নির্বাচন।
বৈঠক শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “জুলাই-আগস্টে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হলো তার পরবর্তিতে বাংলাদেশের পূর্ণজন্ম, এটা যে একটা পলিটিক্যাল সলিউশনে আমরা যাচ্ছি, কীভাবে ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন হবে তার একটি সূচনা আমি বলব। পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে ডায়ালগের সূচনা বলব। কনসেনসাস কমিশন করা হয়েছে তার সাথে পলিটিক্যাল পার্টির সংলাপ।
“আমরা আশা করছি, ছয়টা কমিশন যে রিপোর্টগুলো দিয়েছে সেগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পলিটিক্যাল পার্টির এই কমিশনের আলাপ হবে।”
আলাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটাই হবে ‘জুলাই চার্টার’।
“সেই জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করে আমাদের নির্বাচনের তারিখটা হবে।”
তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মোস্ট লাইকলি ইলেকশনটা হবে ডিসেম্বরের মধ্যে।”
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন অন্তর্বর্তী সরকার।
অক্টোবরে গঠিত এসব কমিশনের মধ্যে ১৫ জানুয়ারি প্রাথমিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয় চারটি সংস্কার কমিশন।
এরমধ্যে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ ছাড়া বাকিগুলো গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। জনপ্রশাসন ও বিচার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হয় ৫ ফেব্রুয়ারি।
এরপর কমিশনগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি।
পরে ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।