শিবগঞ্জ উপজেলায় বিবাহ ও সন্তান ভূমিষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া জনগোষ্ঠী কিছুটা জোর জবরদস্তি করে অর্থহাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে ভুক্তভোগীরা ও এলাকার সাধারন মানুষ। মানসম্মানের ভয়ে তারা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেন হিজরা সম্প্রদায়কে। অর্থ প্রদানে হেরফের হলে তারা উলঙ্গ নিত্য পর্যন্ত করতে কুন্ঠাবোধ করেনা।
শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০০জন হিজড়া সম্প্রদায় রয়েছে। এদের মধ্যে ভাতা পায় ২০জন।
হিজরা সম্প্রদায় জানিয়েছেন, সামাজিক মর্যাদার অভাব ও কর্মহীনতার কারণে আমরা অনেক সময় আমরা অমানবিক আচরণ করে থাকি।
শিবগঞ্জ উপজেলার হিজড়া কমিটির সভাপতি মাসুম ইসলাম মিন্টু ওরফে মুক্তা বলেন, আমরা পেশা পরিবর্তন করতে চাইলেও সামাজিক বাঁধার মুখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারিনা।
আমাদেরকে শুধু রান্নার কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ নেওয়া হয়না। তিনি আরও বলেন, শিবগঞ্জের কোথাও বিয়ে হলে বা সন্তান জন্ম নিলে আমরা সেখানে গিয়ে আন্তরিকতার সাথে কিছু অর্থ দাবি করে থাকি।
গত ১০জুন শিবগঞ্জ পৌর এলাকার কলেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের পুত্র সাইদুর রহমান সনি বিয়েতে হিজরারা ৫০০০ টাকা চাঁদা দাবি করলে মাহবুবুর রহমানের পরিবার শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে হিজড়ারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে উলঙ্গ নৃত্য শুরু করে। উপায় না পেয়ে তাদেরকে ১০০০ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। গত ১৮জুন শিবগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘরী গ্রামের মোস্তা সরদারের বাড়িতে গিয়ে ৫হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে ১হাজার ৫শত টাকায় রফাদফা করা হয়।
একই দিনে বিহার ইউনিয়নের নাটমরিচাই গ্রামের দিনমজুর ফারুকের মেয়ের বিয়েতে গিয়ে তারা ৫০০০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগী পরিবার উপায় না পেয়ে ১০০০ টাকা দিতে চাইলে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ উলঙ্গ নৃত্য শুরু করে। উপায়ন্ত না পেয়ে মানুষের নিকট ধার করে ৫০০০ টাকা প্রদান করলে হিজড়ারা চলে যায়।
এবিষয়ে কথা হয় ফারুকের সাথে। সে বলে, আমি একজন দিনমজুর অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি তার উপর হিজড়ারা এসে টাকা নিয়ে গেলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবগঞ্জ ভূমি অফিস সংলগ্ন হিন্দু কলোনির বাসিন্দারা বলেন, আমাদের কলনিতে একটি শিশু জন্ম নিলে হিজরারা এসে চাঁদা দাবি করে। আমরা দিন আনি দিন খাই, টাকা কোথায় পাবো! উপায় না পেয়ে ৫শত টাকা ধার করে তাদের দিয়েছি।
এখানেই শেষ নয় হাট-বাজার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দলবেঁধে হিজড়াদের চলাচল দিন দিন বেড়েই চলছে।প্রতিনিয়ত মানুষ হিজরাদের খপ্পরে পড়ছে।
ভুক্তভোগী রংমিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলম বলেন এদের টাকা তোলার বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্ত সাধ্যমতো টাকা দিয়েও তাদের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে হিজড়াদের আচরণও বদলে গেছে। আগে সাহায্য চেয়ে টাকা নিলেও এখন জোর জবরদস্তি করে টাকা আদায় করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছে, করোনা মহামারীর কারণে সারাদেশে যখন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে হিজড়ারাও তার ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মহীন হিজড়ারা শিবগঞ্জে এসে অবস্থান নিয়েছে। তারা স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাসা ভাড়া নিয়েছে।
বহিরাগত হিজরারা বলেন, মানুষ আমাদের অনেকে অন্য দৃষ্ঠিতে দেখে, কোথাও গেলে কোন কাজ দেয় না আমাদেরও তো পেট আছে, খাইতে হয়। আমাদের তো কর্ম নেই, মাথা গোজার ঠাই নেই, কোথাও থেকে আমরা কোন সাহায্য সহযোগিতা পাই না, কেউ কি কখন দেখেছে আমাদের জীবন কিভাবে চলছে।
বহিরাগত হিজরাদের বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা হিজড়া কমিটির সভাপতি মাসুম ইসলাম মিন্টু ওরফে মুক্তা বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য অনেক কিছুই করেছে কিন্তু বহিরাগতরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় শিবগঞ্জ এসে এধরনের কাজ করছে। আমি তাদের বাঁধা দিতে পারবো না কারন আমি তো তাদের মুখে অন্য তুলে দিতে পারবো না।
জোর করে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে তিনি আরও জানান, বিয়ে তো মানুষ প্রতিদিন দেয় না আমরা তো আর তাদের বাসায় প্রতিদিন যাই না। বিয়েতে যদি লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে তাহলে আমাদের পেট চালানো তাগিদে অল্প কিছু টাকা পয়সা দিতে আপত্তি কোথায়।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা গণমাধ্যমকে বলেন, লিখিত কোন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশাপাশি কর্মহীন এসব তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির জন্য অতি দ্রুত সরকারি প্রনোদনার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।