কালো টাকার বরপুত্রের কাছে আইনের চোখ অন্ধ। বিচারের দাবীতে সন্তানহারা এক মায়ের আকুতি। পাবে কি ন্যায় বিচার? সন্তান হারানো ছবি বুকে নিয়ে অকুতুভয় বীরের মতো চালিয়ে যাচ্ছেন আইনী লড়াই। হুমকিও কমছিল না। এমন মেডিসিন দিবো মরে কঙ্কাল হয়ে যাবি। ঠিক যেভাবে বলি তেমনি ভাবে থানা পুলিশকে বলবি।
জিম্মি করে রাখা হয়েছিল শিশু সন্তানকে। লাশ নিতে হলে কাগজে স্বাক্ষর করে নাও। কাগজে কি লেখা ছিল তাও আমার জানা নেই। মেয়ের লাশ গ্রহণ করতে হবে, তাকে দাফন করতে হবে চোখে মুখে এমনি চিন্তা। তাই থানার কাগজে স্বাক্ষর করে মেয়ের মরদেহ সনাক্ত করে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা। দাবী একটাই আমার মেয়েকে ওরা মেরে ফেলেছে।
এমনটাই আকুতি মিনতি করে প্রতিবেদককে জানালেন সন্তানহারা মা কুলছুম বেগম। তিনি জানান, দারিদ্রতার কষাঘাতে অসাহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমার পরিচিত জাকির হোসেন আমার দুই মেয়ে রিয়া আক্তার (১৩) ও শিমলা আক্তার (১১) কে ঢাকার গুলশানে বড় লোকের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে গত ৩ আগস্ট ২০১৯ইং তারিখে রিয়া ও শিমলাকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।
ঢাকায় আনার পর ৪/৫ দিনের মধ্যে একটি মোবাইল নাম্বার থেকে আমার কাছে ফোন আসে। আমার মেয়ে রিয়া কান্নাজনিত কন্ঠে বলে মা আমি এখানে ভালো নেই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। গত ১৬ আগস্ট ২০১৯ইং তারিখ ভোর ৫টার সময় আমার বাসার সামনে কালো রঙ্গের একটি প্রাইভেটকারযোগে একজন ভদ্র মহিলা ও তার সাথে আরো দুইজন লোক এসে আমাকে বলে যে, তাদের সাথে ঢাকা যেতে হবে।
আমার মেয়ে নাকি খুব অসুস্থ তারাতারি যেতে হবে। তখন আমি আমার স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে তাদের সাথে ঢাকায় যাই। তাদের বাসায় যাওয়ার পর তারা আমাকে বলে আমার মেয়ে আর নেই। কেন নেই, কি হয়েছে। আমার মেয়ে কোথায়? ঠিক তখনই ১০তালা বিল্ডিংয়ের বেলকুনিতে নিয়ে বলে এখান থেকে তোমার মেয়ে শাড়ী বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে মারা গেছে। তখন আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।
আমি বলি আমার মেয়ে মরতে পারে না। আপনারা নির্যাতন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছেন। এমনটাই প্রলাপ করতে তারা ভয়ভীতি, হুমকি ও আমার ছোট ছেলেকে বাসায় আটকিয়ে রেখে আমাকে ও আমার স্বামীকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি কাগজে স্বাক্ষর করে লাশ মেডিকেলে নিয়ে পরবর্তীতে তাদের গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায় নিয়ে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা নং-৮/১৯। আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতে নারাজী দিলে ১২ মার্চ ২০২০ইং তারিখে আদালতের আদেশমতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি মালিবাগ, ঢাকাকে নির্দেশ প্রদান করেন। যাহার স্মারক নং-২২১।
মামলাটি তদন্ত করেন সিআইডি পুলিশ পরির্দশ মো: মাইনুল ইসলাম পিপিএম, মতিঝিল ইউনিট, ঢাকা। মামলাটি সিআইডি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় বিবাদী (১) মমিনুল আহসান (৪২), পিতা-অজ্ঞাত (২) নূর জাহান বেগম লাকী (৩৯), স্বামী: মমিনুল আহসান (৩) আমিনুল হাজী (৫৮), পিতা-অজ্ঞাত (৪) মনোয়ারা বেগম (৫৫), স্বামী: আমিনুল হাজী (৫) মো: মাঈদুল (৩৭), পিতা-আমিনুল হাজী (৬) সুনিয়া আক্তার (১৮), পিতা- অজ্ঞাত, উভয়ের সাং- বাসা-৯১/এম, প্লাট নং-এ/১০, রোড নং-০৭/এ, (৭) জাকির হোসেন, পিতা-নাহিদুল আলম, সাং-মহনেরচর, থানা: বকশিগঞ্জ, জেলা: জামালপুর।
এদের ষড়যন্ত্রে মামলাটি ধামাচাপা দিয়ে নিষ্পত্তি করার জন্য ইসমাইল হোসেন স্বপন, পিতা-মৃত খোরশেদ আলম, সাং-শেকেরচর নামাপাড়া, বকশিগঞ্জ, জামালপুর এর সহযোগিতায় আমার স্বামী-সন্তানকে সন্ত্রাসীদ্বারা আটক রেখে মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য ইসমাইল হোসেন স্বপন আমাদেরকে ৫শতাংশ জমি দানপত্র করেন এবং বেশকিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে নেন। কিছুদিন পর জানতে পারি মামলাটি সিআইডি তদন্ত রিপোর্ট থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে বিজ্ঞ মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করি। মামলাটি বর্তমানে (পিবিআই) তদন্তাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার আসামীরা আমার আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটি আপোষ করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে আসছে।
এতে করে মনে করি মামলাটি সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালনায় বাঁধা সৃষ্টি হবে। আসামীগণ প্রভাবশালী হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে থানা পুলিশকে আয়ত্ত করে আমার মেয়ের মৃত্যুর রহস্য ভিন্নদিকে প্রভাবিত করে আমাকে ও আমার স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু দেখিয়েছে।
আমার মেয়ে কি এমন করেছে যে, মাত্র ১২দিনের ব্যবধানে রাতে ১০তালা বিল্ডিং দিয়ে পালাতে হবে? আমি দেশের প্রচলিত আইনে আমার মেয়ের মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটন করে দায়ী ও দোষি ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানাচ্ছি। এ বিষয়ে তৎকালীন সময় উক্ত ঠিকানায় কর্মরত নিরাপত্তাকর্মী রাজু মুঠোফোনে জানান, ঘটনার দিন রাতে বিল্ডিং থেকে পড়ে একটি মেয়ে মারা গেছে শুনে বাসার সামনে গিয়ে দেখি ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আরো নিরাপত্তাকর্মীরা রয়েছে।
বর্তমানে আমি ওই ঠিকানায় চাকুরী করি না। এ বিষয়ে মামলা আপোষ করার জন্য জমির দানপত্র মালিক ইসমাইল হোসেন স্বপন মুঠোফোনে জানান, কুলছুম আমার প্রতিবেশী। সে এখানে থাকতো বিদায় ভালো সুসম্পর্কের কারণে ৫শতাংশ জমি দানপত্র করেছি। পাঠক বুঝতে পারছেন ইসমাইল হোসেন স্বপন একজন হাতেম তাই। আসলে কি তাই? দ্বিতীয় পর্বে পাবেন আসল রহস্য।