সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত উপজেলা তাহিরপুরের বিভিন্ন স্পটে দীর্ঘদিন যাবত মাদক ও জুয়ার আসর জমজমাট ভাবে চলছে। সম্প্রতি মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খুনি ভাড়া করে এনে নিজের ছেলেকে হত্যা
করে এক বাবা। বর্তমানে সেই বাবা কারাঘারে রয়েছেন। ভারত থেকে আসা মাদক ও জুয়ার কারণে অনেকেই হয়েছে নিঃস্ব। আর জুয়ারী ও মাদকাসক্তদের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জনসাধারণ।
পুলিশ ২টি স্পটে পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারতীয় অবৈধ বিড়ি, নগদ টাকা, ২টি মোবাইল ও জুয়া খেলার সরঞ্জামসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু মাদক ও জুয়ার বোর্ড পরিচালকরা পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর থানার সাবেক এসআই জামাল উদ্দিন ও চাঁদাবাজ তোতলা আজাদের সহযোগীতায় ২০১৪ সাল থেকে এউপজেলায় মাদক ও জুয়ার বোর্ড চালু হয়।
তাদের নেতৃত্বে উপজেলার পাতারগাঁও, সোনাপুর, ফকিরনগর, ঘাগটিয়া, পুরানঘাট, সততা বাজার, জনতা বাজার, মানিগাঁও, বারহাল, শিমুলতলা, বালিজুরী, সোলেমানপুর, চাঁনপুর, বড়ছড়া, লাকমা, বালিয়াঘাট, শ্রীপুর, জঙ্গলবাড়ি ও
কামড়াবন্দসহ প্রায় অর্ধশতাধিক স্পটে জুয়ার আসর বসানো হতো। সেখানে চলতো ইয়াবা, হেরুইন, মদ ও গাঁজার রমরমা বাণিজ্য। তখন এলাকার যুবক ও বৃদ্ধরা জুয়া ও মাদকের নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্য ধান, চাল থেকে শুরু করে জায়গা জমি পর্যন্ত বিক্রি করতো।
আর এই বিষয়টি তৎকালিন সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে এলাকার ভোক্তভোগিরা জানানোর পর তিনি সব জুয়ার বোর্ড বন্ধ করে দেন।
আর এসআই জামালকে তাহিরপুর থানা থেকে বদলি করে প্রথমে সুনামগঞ্জ ডিবি কার্যালয়ে পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোতে বদলি করা হয়। এরপর নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে তাহিরপুর উপজেলার মাদক ও জুয়া।
এলাকার জনসাধারণ জেগে উঠে এবং এসআই জামালের সহযোগী চাঁদাবাজ তোতলা আজাদকে চাঁদাবাজি ও ইয়াবা বিক্রির জন্য বড়ছড়া, লাউড়গড় ও বাদাঘাট বাজারে ৩বার গণধৌলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
পরে মুছলেখা সে দিয়ে রক্ষা পায়। তাই এলাকার ভোক্তভোগিরা আদালতে গিয়ে তোতলা আজাদের বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে ৩টা চাঁদাবাজি মামলা করে।
এমতাবস্থায় তাহিরপুর থানায় ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার যোগদানের পর মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে সীমান্তের টেকেরঘাট, চাঁনপুর, লাউড়গড়, কামড়াবন্দ ও তাহিরপুর সদরসহ একাধিক স্পট থেকে সীমান্ত চোরাচাকারবারি, বিজিবি সোর্স ও মাদক ব্যবসায়ীসহ জুয়ারীদের ইয়াবা, মদ, গাঁজা ও বিড়িসহ গ্রেফতার করে।
এছাড়া র্যাব বাহিনীও সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, অস্ত্র ও গাঁজাসহ অনেককে গ্রেফতার করেছে। এসব অভিযানের কারণে ক্ষনিকের জন্য এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসলেও থেমে যায়নি মাদক ব্যবসায়ী, সোর্স ও তাদের গডফাদাররা।
তারা প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে ভারত থেকে মাদকদ্রব্য পাচাঁরের পর প্রতিরাতে উপজেলার বিভিন্ন স্পটে আবারও জুয়া ও মাদকের আসর পরিচালনা শুরু করে। সেই সাথে পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে চাঁদাবাজি করছে।
প্রতিদিনের মতো গত সোমবার (২৬ জুলাই) রাতে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের পুরানঘাট গ্রামের সততা বাজারে প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুস্তম আলীর ছেলে সালাউদ্দিন নিখিল ও আব্দুর নুর তালুকদারের ছেলে মামুন তালুকদারের ২টি চা স্টলসহ একাধিক স্পটে জুয়ার আসর বসে।
এখবর পেয়ে বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা জুয়ার বোর্ডে পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারতীয় অবৈধ বিড়ি, নগদ টাকা, জুয়া খেলার তাস, গাফলা ও ২টি মোবাইলসহ ৩জন জুয়ারীকে গ্রেফতার করে। এসময় মাদক ও জুয়ার বোর্ড পরিচালক সালাউদ্দিন ও মামুনসহ তাদের গডফাদার পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত জুয়ারীরা হলেন- উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের পুরানঘাট গ্রামের মৃত সাব্বির উদ্দিনের ছেলে মালু মিয়া, একই গ্রামের আবু জাহেরের ছেলে মোহাম্মদ হানিফা, কুদরত আলীর ছেলে সুজন মিয়া। এঘটনার প্রেক্ষিতে পরদিন মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকালে পুলিশ বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত ৩ জুয়ারীর বিরুদ্ধে থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে সন্ধ্যায় কারাঘারে পাঠায়।
কিন্তু মাদক ও জুয়ার বোর্ড পরিচালক ও তাদের গডফাদারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার সাংবাদিকদের বলেন- জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে ৩জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।