কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: শনিবার থেকে সারা দেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার পৌরসভাসহ ইউনিয়নে গণ টিকাদান কর্মসূচি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় ৮৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ৪৬ হাজার ৮শত জনকে টিকা প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। কুড়িগ্রাম পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা, সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান, পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম,কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাড: আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ। পরে তারা বিভিন্ন টিকা প্রদান কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
এ কর্মসূচিতে এর আগে প্রত্যেকটি টিকাদান কেন্দ্রে বিভিন্ন বুথে সকাল থেকে মানুষের স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণে রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম চলে।
তবে কেন্দ্র গুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেজিষ্ট্রেশনকৃত বয়স্ক ব্যক্তি, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের টিকাদান কর্মসূচি চলতে থাকে। ২৫বছরের কম,দুগ্ধ দানকারী মাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়।
সকাল থেকে লম্বা লাইন। টিকা প্রদানের একটি করে বুথ হওয়ায় সময় লাগে অনেক বেশী। ফলে আগতদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
টিকা নিতে আসা কচাকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা বলেন,টিকা নিতে আসলাম ভীড় খুব। এখানে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে না। কোভিড-১৯ লেখা সম্বলিত একটি কার্ডে লিখে টিকা দিচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন,শুনেছি সকাল থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে। তবে শিশু নিকেতন কেন্দ্রে ১০টার পরে শুরু হয়েছে। মানুষ সকাল থেকে এসেই ভীড় করেছেন।
এতো ভীড় হবে আমরা বুঝতে পারিনি।
রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা জিতেন চন্দ্র দাস বলেন,সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কম্পিউটার
নষ্ট হয়ে যাওয়া রেজিস্ট্রেশন না করে কোভিড-১৯ লেখা একটি কার্ডে এনআইডি নম্বর লিখে টিকা দেয়। পরে তারা এন্ট্রি করবে এমনটি বলেছে। এছাড়া কেন্দ্রে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ভীড় ছিল বেশি।
জেলা প্রশাসক মাহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আজকে টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে কিছু গাইডলাইন পেয়েছি। সেই মোতাবেক কুড়িগ্রাম জেলায় প্রত্যেকটি পৌরসভা এবং ইউনিয়নে শুরু হয়েছে। এরমূল উদ্যোশ্য হচ্ছে টিকা কার্যক্রম বেগবান করা এবং গণ মানুষের কাছে পৌঁছানো।
টিকা কার্যক্রম রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে তিনি বলেন,সুরক্ষা যে অ্যাপস টি রয়েছে সেটি এখন অনেক আপডেট এবং সহজেই রেজিস্ট্রেশন করা যায়। আর কুড়িগ্রামের ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় নেটওয়ার্ক সমস্যা হলে সেখানে প্রত্যন্ত এলাকা যে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় তাই দিয়ে ওয়াইফাই করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন,টিকা নেবার ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে একটা সচেতনতা এসেছে। জনগণ এজন্য কিন্তু খুব আগ্রহ নিয়ে টিকা নিতে আসছেন। যদি বাড়তি জনগণের ভীড় বা অরাজকতা পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছি।
কুড়িগ্রাম মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন,পর্যাপ্ত টিকা পৌরসভার জন্য তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে টিকা প্রদানকারীদের আজকে সকালে প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করায় প্রায় ঘন্টা খানেক দেরি হয়েছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও আগে করলে ভাল হতো।
সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান জানান, জেলার তিনটি পৌরসভাসহ ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নে একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একদিনে মোট ৪৬ হাজার ৮শত টিকা প্রদান করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। ছোট ছোট কিছু ক্রটি হচ্ছে তা নজরে আসামাত্রই সমাধান করা হচ্ছে।
টার্গেটের চেয়ে লোক সমাগম বেশী। তাই কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাদের রেজিস্ট্রেশন করা আছে তাদের পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে।কাজেই হতাশার কিছু নেই। সবাইকে টিকা প্রদান কর্মসুচির আওতায় আনা হবে। এছাড়াও চরের ও দ্বীপচরের দুর্গম চরাঞ্চলেও এ টিকাদান কার্যক্রম অব্যাত ভাবে চলবে।