কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সমাপ্ত হয়নি নতুন সোনাহাট সেতুর নির্মাণ কাজ। এতে ওই সেতুর উত্তর পাশে পুরাতন রেল সেতুটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হালকা ও ভারি যানবাহন। বর্তমানে পুরাতন ওই সেতুটির শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে।যেকোনো সময় পূরাতন ওই সেতুটি ভেঙ্গে ঘটতে পারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের একনেক বৈঠকে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দরগামী সড়কের পাইকেরছড়া ইউনিয়নের দুধকুমার নদের উপর নড়বড়ে শতবর্ষী রেল সেতুর কয়েকশ গজ দক্ষিনে অপর একটি সড়ক সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। একনেকে অনুমোদিত ৬৪৫ মিটার দৈর্ঘের সোনাহাট সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২৩২ কোটি টাকা।
আরো জানা যায়,সোনাহাট সেতুটি ১৩ টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। সেতুর দুই এ্যপার্টমেন্ট সহ পিলারের জন্য মোট ১৫৮টি পাইলিং করা হবে। এছাড়া সেতুর উভয় দিকে ২ হাজার ৩২০ মিটার সংযোগ সড়ক ও ৮১৪ মিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২২ জুলাই। মূল সেতু সহ সংযোগ সড়ক ও তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় ধরা হয় ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারী পর্যন্ত মোট ১৮ মাস।
সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের দুই মাস অতিবাহিত হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর পূর্ব প্রান্তে সেতুর জন্য একটিমাত্র এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছে। সেতুর দুই প্রান্তের একপ্রান্তেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। পূর্ব প্রান্তে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ চলমান থাকলেও পশ্চিম প্রান্তে বাঁধ নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে সড়ক সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চাপ বেড়েছে নড়বড়ে শতবর্ষী রেল সেতুর উপর। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেল সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে গিয়ে ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা।
সোনাহাট সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিঃ ও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রকল্প পরিচালক শামিম রেজা জানান, পাইলিংয়ের পর পিলারের কাজ করতে হয়। পাইলিংয়ে ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়। দুধকুমারের তলদেশের বালু চিকন। চিকন বালু ভারি যন্ত্রপাতির চাপ ধরে রাখতে না পারার কারনে পাইলিংয়ের সময় ধ্বসের সৃষ্টি হয়। যার ফলে পাইলিং করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই মূল সেতুর কাজ প্রায় ১৭ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন এছাড়া সেতুর উভয় পাশে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যাচ্ছে না। অপর দিকে এসব সমস্যার কারণে পূর্ব তীরের চলমান সেতু রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বাঁধ নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পথচারী ও ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে যত দেরি হবে সেতু নির্মাণের সাথে জড়িত বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের ততই লাভ হবে। কেননা তারা দফায় দফায় বাজেট বাড়ানোর সুযোগ পাবে। দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলো মুলত তাদের আখের গোছাতেই নানা অযুহাতে সেতু নির্মাণে বিলম্ব করছে। ডিজাইন সমস্যা সমাধানে ১৭ মাস সময় লাগার কথা নয়।
সোনাহাট স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবু তাহের ফরাজি জানান, নতুন সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই যদি পুরাতন রেল সেতুটি ভেঙে পড়ে তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবো তা নয়, এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জমি অধিগ্রহনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয় জানেন।
সোনাহাট সেতুর দুই পাশের এপ্রোচ রোডের জমি অধিগ্রহনের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম বলেন এপ্রোচ রোডের অধিগ্রহণের কাজ চলমান।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, দুধকুমার নদের সয়েল কন্ডিশনের কারণে পাইলিংয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মিহি বালুর কারণে পাইলিং কালে ধ্বসের সৃষ্টি হয়ে যন্ত্রপাতি সহ আশপাশ দেবে যায়। মাটির অবস্থাগত কারণে সেতুর ডিজাইন রিভিউ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।