রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
spot_img
Homeবিচিত্র সংবাদকুড়িগ্রামের রৌমারীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি...

কুড়িগ্রামের রৌমারীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় টানা ৬দিন ধরে থাকা সৃষ্ট বন্যার পানি হ্রাস পেতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে রাস্তা-ঘাট থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি পানি বন্দি মানুষের। বন্যার পানি প্রবেশ করায় উপজেলার ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ

রেখেছে শিক্ষা বিভাগ। উপজেলার ৯৩৫ হেক্টর জমির ধান, ৯০৩ হেক্টর জমির পাট, ৭৮ হেক্টর জমির তিল ও ১৪৭ হেক্টর জমির শাকসবজী ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কথা জানিয়েছে পানি বন্দি একাধিক ইউনিয়নের

চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ অালী বলেন, গতকাল থেকে কিছুটা পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অাজ অামার ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের মাঝে কিছু শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা

হবে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানতে পেরেছি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অাজ পানিবন্দি মানুষজনের মাঝে প্রাথমিকভাবে ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তা অারও বাড়ানো

হবে। অন্যদিকে ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে এসব নদ-নদী অববাহিকতার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল গুলি প্লাবিত হয়ে কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় করে এক স্থান

থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছে। অনেকের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় ধান, চাউল, চুলা ও শুকনো খড়িসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র চৌকি কিংবা উঁচু স্থানে তুলে রেখেছেন তাঁরা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিবার নিয়ে অাতংকে রাত কাটছে তাদের। জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের

পোড়ার চর এলাকার জহুরুল বলেন, ‘তিন ধরে বাড়ীতে পানি থাকলেও সে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল ঘরে প্রবেশ করেছে। এতে করে ধান, চাউল, শুকনো খড়ি ও চুলাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চৌকিতে তুলেছি। রান্না করে খাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে পরেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিবার

নিয়ে অাতংকে রাত কাটাচ্ছি।’ যাত্রাপুর ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্যের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে পোড়ারচর ও পূর্ব তিন হাজারী, মুছল্লীপাড়া, কালির অালগা, মন্ডলপাড়া, পশ্চিম মুছল্লী পাড়া,

ঝুনকার চর, ভগবতীপুর ও পার্বতীপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে এসব এলাকার বেশ পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। পানিবন্দি এসব পরিবারের মানুষজন নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছে। অনেকের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ

করায় ধান, চাউল, চুলা ও শুকনো খড়িসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র চৌকি কিংবা উঁচু স্থানে তুলে রেখেছেন তাঁরা। অপরদিকে, গত কয়েক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্রের অাগ্রাসী ভাঙনের কবলে পরে ইউনিয়নের পোড়ারচর, গোয়াইলপুরী ও পূর্ব তিন হাজারী এলাকার প্রায় ৪৫টি পরিবারের বসতভিটা

নদী গর্ভে চলে গেছে। এসব পরিবার বসতবাড়ী সরিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসতি গড়েছেন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কবলে রয়েছে এই তিন এলাকার অন্তত ৭-১০টি পরিবারের বসতবাড়ী। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় অাতংকে দিন পার করছেন তাঁরা। ভাঙনের হুমকিতে থাকা গোয়াইলপুরী

এলাকার পিয়ন অালীও পরিবার নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রাত পার করছেন। পিয়ন অালী বলেন, ‘গত বন্যার পর থেকেই এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে ইতিমধ্যে এলাকার ২০-২৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসতি গড়েছেন। এখন অামার মতো ৮নং ওয়ার্ডের অারও বেশ

কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ী ভাঙনের হুমকীতে থাকায় পরিবার নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছি।’ যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে গত সাত দিন ধরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধিতে

পোড়ারচর ও পূর্ব তিন হাজারী শতাধিক পরিবার ছাড়াও পানি অারও বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হচ্ছে। এতে করে এসব এলাকায় বসতরত পরিবার গুলো নানা দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও গত কয়েক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কবলে পরে পোড়ারচর, গোয়াইলপুরী ও পূর্ব তিন হাজারী

এলাকার প্রায় ৪৫টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে এখনও ৭-১০টি পরিবারের বসতভিটা। যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে এসব এলাকার

কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলজার হোসেন মন্ডল জানান, ধরলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে সন্ন্যাসীর চর, মদাজলের নিম্নাঞ্চল, চর সারডোব, ছাট কালুয়া, লক্ষ্মীকান্ত, মাস্টারের, চর অারাজী পলাশবাড়ীসহ হেমের

কুটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, আমি সকাল থেকে প্লাবিত এলাকা গুলো পরিদর্শন করছি। পরে আপনাকে বিস্তারিত জানাব। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী

আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে জেলার চরাঞ্চলগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ