করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ গরিব পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। প্রত্যেক পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। ঈদের আগে মোবাইলের মাধ্যমে সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার হিসেবে এ অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঈদ উপহার দেওয়ার পাশাপাশি আরও তিনটি প্রণোদনা প্যাকেজ খুব শিগগির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত বছরের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবার ও হতদরিদ্র গোষ্ঠীর প্রত্যেককে আড়াই হাজার টাকার নগদ আর্থিক সহায়তা দেন। পরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার পরিবারের মধ্যে ৮৭৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। আর বাকি ১০১ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘লকডাউন’ দেওয়া হয়েছে। এই লকডাউনের ফলে সমাজের দরিদ্র লোকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে আবারো ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছর মে মাসে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারকে এ ধরনের সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছিল। এখন আবার করোনা দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দেশ কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই লকডাউনের মেয়াদ সাত দিন বলা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ১৪ দিন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ সাধারণ মানুষ চলাচলেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাজের দরিদ্র মানুষ। কারণ এই সময় তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। এই মানুষদের কিছু সাশ্রয় দিতে গতবারের মতো এবার আড়াই হাজার করে নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গতবার যারা এই সহায়তা পেয়েছে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারা এবারো এই সহায়তা পাবেন। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার তালিকা রয়েছে, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষ।
জানা গেছে, পরিবারগুলোকে টাকা দেওয়া হবে মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে বিকাশ, রকেট, নগদের মাধ্যমে এই অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে। টাকা পৌঁছানোর জন্য এমএফএসগুলো প্রতি হাজারে পাবে ৬ টাকা। এ টাকা সরকার বহন করবে। অর্থাৎ সুবিধাভোগীদের হাতে ২৫০০ টাকা পৌঁছবে।
উল্লেখ্য, গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের পাঠানো ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের মধ্যে ২৮ লাখ মানুষের তালিকাই ছিল ভুলে ভরা ও ভুয়া। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৬ পরিবারে নগদ সহায়তা পাঠাতে সক্ষম হয়। এতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ভুল তালিকার জন্য বাকি ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৪ পরিবারে নগদ সহায়তা পাঠানো স্থগিত রাখা হয়েছিল।