১. কলেমায়ে তাওহিদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ : তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদানকারী কলেমা পরকালে আমলের পাল্লা ভারী করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের একজনকে সব সৃষ্টির সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে ৯৯টি আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তারপর তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি কি এগুলো থেকে কোনো একটি (গুনাহ) অস্বীকার করতে পারো? আমার লেখক ফেরেশতারা কি তোমার ওপর জুলুম করেছে? সে বলবে, না, হে রব!
তিনি আবার প্রশ্ন করবেন, তোমার কোনো অভিযোগ আছে কি? সে বলবে, না, হে আমার রব! তিনি বলবেন, আমার কাছে তোমার একটি সওয়াব আছে। আজ তোমার ওপর এতটুকু জুলুমও করা হবে না। তখন ছোট একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে। এতে লেখা থাকবে, ‘আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিই যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’
তিনি তাকে বলবেন, দাঁড়িপাল্লার সামনে যাও। সে বলবে, হে রব! এতগুলো খাতার বিপরীতে এই সামান্য কাগজটুকুর কী আর ওজন হবে? তিনি বলবেন, তোমার ওপর কোনো জুলুম করা হবে না। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, তারপর খাতাগুলো এক পাল্লায় রাখা হবে এবং ওই টুকরাটি আরেক পাল্লায় রাখা হবে। ওজনে খাতাগুলোর পাল্লা হালকা হবে এবং কাগজের টুকরার পাল্লা ভারী হবে। আর আল্লাহ তাআলার নামের বিপরীতে কোনো কিছুই ভারী হতে পারে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩০০)
২. ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ বলা : ঈমানদার ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণে তাসবিহ, তাহলিল ও জিকির করলে পরকালে নেকির পাল্লা ভারী হবে। এই মর্মে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, দুটি কলেমা আছে, যেগুলো দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী। কলেমা দুটি হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম। অর্থাৎ আমরা আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, মহান আল্লাহ (যাবতীয় ত্রুটিবিচ্যুতি থেকে) অতি পবিত্র।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৬৩)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, ‘আবু মালিক আল-আশআরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ দাঁড়িপাল্লা পূর্ণ করে দেয়। ‘সুবহানাল্লাহ’ ও আল-হামদুলিল্লাহ’ একসঙ্গে আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)
৩. উত্তম চরিত্র : মানুষ উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে দুনিয়ায় যেমন সম্মানিত ও সমাদৃত হয়, পরকালেও তেমনি অশেষ সওয়াবের অধিকারী হবে। আর এ বৈশিষ্ট্য তার নেকির পাল্লা ভারী করবে। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামত দিবসে মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে অধিক ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীল ও কটুভাষীর প্রতি রাগান্বিত হন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)
৪. জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা : মানুষ মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা মুমিনের ছয়টি হকের অন্যতম। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী বহু সওয়াবের অধিকারী হয়, যা পরকালে তার নেকির পাল্লা ভারী করবে। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য ‘এক কিরাত’। আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে, তার জন্য ‘দুই কিরাত’। জিজ্ঞেস করা হলো, ‘দুই কিরাত’ কী? তিনি বলেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)। (বুখারি, হাদিস : ১৩২৫)
৫. সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করা ও সওয়াব কামনা করা : দুনিয়ায় ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মানুষের সর্বাধিক প্রিয় বস্তু। তাই ধন-সম্পদ নষ্ট হলে কিংবা সন্তান-সন্ততি মারা গেলে মানুষ ভেঙে পড়ে। অনেক সময় দিশাহারা হয়ে যায়। কিন্তু মুমিন সব বিপদ-মসিবতে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে। বিপদকে সে গুনাহ মাফের মাধ্যম হিসেবে কল্যাণকর জ্ঞান করে। তেমনি সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করে। আর এর ফলে সে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হয় এবং তার নেকির পাল্লা ভারী হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি জিনিসের জন্য বাহ্ বাহ্। যা দাঁড়িপাল্লায় অধিক ভারী হবে। তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ (বলা) এবং সৎ সন্তানের মৃত্যুর পরে পিতার সওয়াব কামনা করা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮১০১)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।