বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪
spot_img
Homeপাঠকের কলামজালের ফাঁদে নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে পাখি

জালের ফাঁদে নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে পাখি

কৃষকেরা বলছেন, বনবিভাগ, কৃষিবিভাগসহ কারো কাছ থেকে কোনো সচেতনতামূলক পরামর্শ বা নির্দেশনা পান না, না বুঝে এসব করছেন। এদিকে অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক আর সৌন্দর্য্যগত দিক দিয়ে পাখির গুরুত্ব অপরিসীম জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাখি নিধন পরিবেশের ভারসাম্য ও খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায়, যার প্রভাব পড়ে মানবজাতির ওপর।

লিচু ক্ষেতে বাগানের পর বাগান চারদিকে কারেন্ট জালের ফাঁদ। পাখির হাত থেকে লিচু ক্ষেতের ফল ও ফসল রক্ষায় এই কারেন্ট জাল ব্যবহার করে আসছে খামারি ও কৃষকেরা। পাখি যাতে লিচু খেতে না পারে তাই এসব ব্যবস্থা। তবে পাখি তো আর মিহি জাল সম্পর্কে সচেতন নয়। তারা অবাধে এসে গাছের ডালে বসতে বা উড়তে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও মুক্তি নেই। লিচু বাগানের চারদিকে মাটি থেকে ৩০-৩৫ ফুট উচ্চতায় কারেন্ট জালে সারা বাগান ঢেকে রাখা হয়। আর সিনথেটিক সুতার তৈরি মিহি জালে প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে আটকে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখি। অনেক পাখিই আছে, ফল খাওয়া যাদের অভ্যাস নয়। অথচ জালের ফাঁদে পড়ে নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের কুঠিপাড়া গ্রামের লিচু বাগানগুলোতে দেখা গেল এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মানুষ যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে সভ্যতার চরম শিখরে, তখন ক্রমেই বিবর্ণ হয়েছে প্রকৃতি আর পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ছড়িয়ে পড়ায় সেই ভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে ফের নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বিশ্ববাসী, হয়েছে ঘরবন্দি। বলা হচ্ছে, এমন অবস্থায় প্রকৃতি ফিরতে শুরু করেছে স্বরূপে-স্বমহিমায়। ভারসাম্য ফিরতে শুরু করেছে পরিবেশে, প্রাণ ফিরছে জীববৈচিত্র্যে। কিন্তু ঝিনাইদহে এভাবে প্রতিদিন পাখি নিধনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলার সচেতন মানুষ। পাখি নিধনের ফলে ফল-ফসলের পরাগায়ন, পরিবেশের ভারসাম্য ও খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটে, যার প্রভাব পড়ে মানবজাতির ওপর।

ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪১৮ হেক্টর জমিতে শতাধিক বাগানে লিচু চাষ হয়েছে । লিচু, বাউকুলসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে কারেন্ট জালে জড়িয়ে জাতীয় পাখি দোয়েল, কাঠঠোকরা, বনটিয়া, কবুতর, ঘুঘু, বুলবুলি, লক্ষ্মীপেঁচা, ডাহুক, শালিক, চড়ুইসহ হরেক পাখি প্রতিনিয়ত মরছে। মারা পড়ছে বিভিন্ন কীট-পতঙ্গও, বিলুপ্তপ্রায় কিছু বন্যপ্রাণীও প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে এই ফাঁদে। বাগানজুড়ে ঝুলে থাকছে অসংখ্য মৃত পাখপাখালি। নিরাপদ ফল-ফসল উৎপাদন আর বাজারজাতকরণে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে না। লিচু রক্ষায় শব্দযন্ত্র, কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করা উচিত। জালের ফাঁদ নয়, পাখির কিচিরমিচিরে প্রাণ ফিরে পাক প্রকৃতি, ভারসাম্য ফিরে আসুক পরিবেশে।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ