কুড়িগ্রাম হাসপাতালে এক শ্রেনীর কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় সিন্ডিকেট চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সিন্ডেকেটটির অনিয়ম ও দুর্নিতীর কারণে লোপাট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা, জনগন বঞ্চিত হচেছ সেবা থেকে। তাদের কাছে জিম্মি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। নিয়োগ,কেনাকাটা, যন্ত্রপাতি স্থাপন এমনকি পদায়ন ও বদলি নিয়ন্ত্রন সিন্ডিকেটের হাতে।
কয়েকমাস আগে এমএসআর এর টেন্ডারে নাটোরের মেসার্স এমদাদুল হক ও এইচটি ড্রাগ হাউস ৩১ শতাংশ কম দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মনোনীত হন।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে কার্যাদেশ প্রদানের জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান দুটির সত্বাধিকারী এমদাদুল হকের নাম সুপারীশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করে।
কিন্তু বেপরোয়া সিন্ডেকেট চক্রটি হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে ঠিকাদার এমদাদুল হকেকে আটকিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে লাঞ্চিত করে জোড় করে প্রত্যাহার পত্র লিখে নেয়।তত্বাবধায়ক ও মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মেলেনি।
তৎকালীন তত্ববধায়ক ডা. নবিউর রহমান সিন্ডিকেট চক্রটিকে যথাযথ ভাবে সহযোগীতা না করায় তাকে লাঞ্চিত হয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে বদলী হতে হয়। ২৫ এপ্রিল নতুন তত্বাবধায়ক ডাঃ সহিদুল্লা লিংকন যোগদান করার এক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠিকে ব্যবহার করে সিন্ডেকেট চক্রটির মনোনীত মেসার্স মাইক্রো ট্রেডাসকে কার্যাদেশ প্রদানের জন্য বিধীবহিভুতভাবে সুপারিশ করেন।
নিয়ম অনুযায়ী পুণঃ দরপত্র আহবান করা বাধ্যতামুলক হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করে। এতে সরকারের প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। মেসার্স মাইক্রো ট্রেডার্স প্রায় এক দশক থেকে সিন্ডিকেট চক্রটির সহায়তায় কুড়িগ্রাম হাসপাতালে সকল ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রন করে আসছে। তাদের সরবাহকৃত নিম্নমানের উপকরণ এবং মেয়াদ উর্ত্তীন ঔষধ দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।
২০১৭/২০১৮ অর্থবছরে বির্তকিত মের্সাস মাইক্রো ট্রের্ডাস দুই কোটি টাকার নিম্নমানের এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ভারী যন্ত্রপাতি চাহিদা ও স্থাপনের জায়গা না থাকা সত্তেও জোর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সরবাহ নিতে বাধ্য করে।
এ ব্যাপারে দুদক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হয়। তিন বছর গত হলেও তিনজন তত্বাবধায়কের কেহই নিম্নমানের এসব সামগ্রী হাসপাতালে গ্রহন করতে সম্মত হয়নি। নতুন তত্বাবধায়ক যোগদান করেই ২৮ এপ্রিল/২১ তারিখের ৪৯৮ ও ৪৯৯ স্মারকে উক্ত পরিত্যাক্ত যন্ত্রপাতির বিল পরিশোধের নিমিত্তে বাজেট প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ করে।
১৭মে/২১ তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের উপকরণ গুলো হাপাতালে স্থাপন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিন্ডিকেট চক্রটি ৪ বছর পর ভারী যন্ত্রপাতি গুলো গছিয়ে দিতে সক্ষম হয়। পূর্বের তিন তত্ববধায়ক এর সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান ভারী যন্ত্রপাতী স্থাপনের চাহিদা বরাদ্ধ জায়গা লোকবল না থাকা সত্বেও জোর করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মালামাল গুলো সরবরাহ করে।
এ ব্যাপারে দুদকের তদন্তের বিষয়টি তারা স্বীকার করে। দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকায় এই উপকরণগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এদিকে নতুন ২৫০ শয্যা ভবনে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করায় পূর্বের দু’জন তত্বাবধায়ক ভবনটি বুঝে নিতে অস্বীকার করে। নতুন তত্বাবধায়ক যোগদান করেই সিন্ডিক্টের সাথে সমঝোতা করে গত ৫ মে ভবনটি বুঝে নেয়।
ঠিকাদার এমদাদুল হক জানান, তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে এমএস আর এর কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন।
এমএসআর এর টেন্ডারে শতকরা ৩১ভাগ কম দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পাই। সিন্ডিকেট চক্রটি আমার সাথে সমঝোতা করার জন্য কুড়িগ্রামে ডেকে আনে। কুড়িগ্রামে আমাকে ঘরে আাটকিয়ে জীবনের হুমকি দিয়ে লাঞ্চিত করে জোর করে প্যাডে টেন্ডারের প্রত্যাহার পত্রের সহি নেয়। তত্ববধায়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। এখনও পর্যন্ত মোবাইলে আমাকে জীবন নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম হাসপালের তত্বাবধায়ক ডাঃ সহিদুল্লা লিংকন বলেন, কয়েক দিন আগে ঠিকাদারের কাছে হাসপাতালের নতুন ভবনটি বুঝিয়ে নিয়েছি। সেখানে তিন বছর আগে যে সব যন্ত্রপাতি এসেছিল তা ঠিকাদার কর্তৃক স্থাপনের কাজ চলছে। পরে আমরা বুঝিয়ে নিবো।
তিনি আরও বলেন দীর্ঘদিন যন্ত্রপাতিগুলো পড়ে থাকলেও এগুলো যেহেতু প্যাকেটে ছিল তাই নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন এমএসআর এর ঠিকাদার মেসার্স এমদাদুল হক ও এইচটি ড্রাগ হাউস কাজের অপরাগতা প্রকাশ করায় দ্বিতীয় দরতার নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।