দেশের প্রখ্যাত আড়িয়াল বিল মাটি দস্যুদের ক্রমাগত মাটি উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও কৃষি ভয়ংকর হুমকির মুখে পরতে যাচ্ছে।খাদ্য শস্য ও প্রাকৃতিক মৎস্য ভান্ডার বলে খ্যাত বিলের যত্র তত্র খনন করে মাটি লুট করছে স্হানীয় ভূমি দস্যু চক্র গুলো।
বছরের পর বছর চলছে এমন মাটি লুন্ঠন প্রক্রিয়া। শুকনোর মৌসুম জুড়ে চলে মাটি কাটার কাজ, মৌসুমে জমিয়ে রাখা মাটি বর্ষায় বিক্রি করতে দেখা যায়। কৃষি জমি কাটার পাশা পাশি কেটে ফেলা
হচ্ছে বিভিন্ন সরকারী জমির মাটি। এমন কি সরকারীভাবে খননকৃত খালের পারের মাটিও লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যু চক্র গুলো।
এক দিকে কৃষি জমি কমছে অন্য দিকে পরিবেশের বিপর্যয়ের কারনে কৃষি ফলনে ব্যপক প্রভাব পরায় ফলন কমে যাওয়ার আশন্কায় অনেক কৃষক আবাদ হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করতে না পারলে কৃষি ও কৃষকদের ব্যপক ক্ষতি মেনে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। বিল ও বিল পারের প্রকৃতি রক্ষায় আশের পাশের ইউনিয়ন গুলোর স্হানীয় প্রতিনিধিগণদের কোন উদ্দোগ গ্রহন করত দেখা যায়নি।
বিশেষ করে বাড়ৈখালী,হাসাড়া,শ্যামসিদ্ধী,বাঘড়া,ষোলগর অত্র ইউনিয়নের সীমানা বিল জুড়ে। আড়িয়াল বিলের মাটি লুন্ঠন করে বিক্রী করা অর্থের ভাগ যাচ্ছে বিভিন্ন স্হরের নেতা-কর্মী ও কিছু
অসাদু কর্মকর্তাদের পকেটে। বিশাল সীমানার বিভিন্ন জায়গায় মাটি উত্তোলন করায় অনেক সময় স্হানীয় দায়িত্বশীলদের জানারও সুযোগ থাকেনা।
সরজমিন গুরে দেখা যা,আলম পুর হতে মদন খালী বড় খালের পাড় গেষে মাটির কাইট গড়ে তুলেছে ভূমিদস্যু চক্র গুলো।প্রতি দিন প্রায় ৪০/৫০ টি টলারে এ মাটি বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রী হচ্ছে।সারা রাত টলার চলার শব্দে অনেক শিশু,বৃদ্ধ,মহিলা অসুস্হ হয়ে পরেছেন বলে জানা গেছে।
মদন খালী পকেটের দক্ষিণ পার ঘেষে মাটি কেটে বিক্রী করছে মদন খালী এলাকার মৃত ইউছুব তালুকদারের ছেলে শিপন তালুকদার তার সহযোগী স্বাধীন।
একটু এগিয়ে দক্ষিণে গেলে মাটি লুট করছেন বাড়ৈখালী ইউনিয়ন সাবেক যুবলীগ সভাপতি সাইদূর রহমান সাটিন তার সহযোগী নুরুর ছেলে চন্চল ও হোসেন বেপারীর ছেলে মোঃ জসিম।খালের বাড়ৈখালী অংশ ভেকু বসিয়েছেন বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কায়সার আহমেদ রনি।
কয়েকটি ভেকুর পরিচালনা করছেন বাড়ৈখালী ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি ও ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ ইলিয়াস। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়,প্রতি দিন ৪০/৬০ টলার এসব মাটি কথিত কাইট হতে সংগ্রহ করে বিভিন্ন ইট ভাটায় পাচার করে যাচ্ছে। প্রতি টলার মাটির মূল্য ৩০০০ টাকা।
অবৈধ মাটি বিক্রী কে কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে একটি চাদাবাজ চক্র। বিল হতে আলমপুর হয়ে শেখরনগর দিয়ে টলার চালকদের আলম পুর দক্ষিণ হাটি অংশে চাদা দিতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ক্রমাগত আড়িয়াল বিলের মাটি খননের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমেছে ব্যপক হারে।
বিগত সময়ে খননকৃত কৃষি জমি গুলো ডুবা নালার মত পরিত্যক্ত পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে,কারন আড়িয়াল বিলে ধান উৎপাদন ব্যতিত পুকুর,নালা,ডাঙ্গায় প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদন হলেও নবাগন্জের কাশিয়া খালী বেড়ি বাধ নির্মাণের পর বিলে পানির প্রবাহ কমে গেছে ,গোলা পানি নেই বললেই চলে।
মাছের অপ্রতুলতায় জমি গুলো হতে মাছও সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছেনা।এভাবে গড় হারে মাটি বিক্রির ফলে আগামী ক বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় ফসলি জমির সংস্কট সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
শুধু মাত্র ব্যক্তি মালকানাধীন জমিই নয় বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের পারও কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভূমি দস্যূ চক্র গুলো।মাটি লুট নিয়ে প্রায়শই ছোট খাট দাঙ্গা হাঙ্গামাও হয়।বিল অধ্যুষিত
ইউপি পরিষদ গুলোর দায়িত্ব প্রাপ্তদের প্রকৃতি ও ফসলি জমি রক্ষায় তেমন কোন উদ্দোগ দেখেনি স্হানীয় কৃষক শ্রেণী অথচো তাদের গোপন শ্রেল্টারে পরিচালিত হচ্ছে অনেক ভূমি দস্যু।
আড়িয়াল বিল কে শস্য উৎপাদনের কেন্দ্র বলে যেখানে সরকারের স্মরণকালে বড় প্রকল্প আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর রুখে দেওয়া হয়,বিল ও কুষি জমি রক্ষায় কাউ কে কোন কথা বলতে দেখা যায় না,যদিও উপজেলায় নদী,বিল ঝিল রক্ষায় কমিটি রয়েছে নিয়মিত সভাও হয়।
প্রশাসনের দায়িত্বশীলগণ কখনও জোরালে পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন বলে জানা যায়নি তবে উপজেলার অনান্য ইউপি শ্যামসিদ্ধী,রাঢ়িখাল,বাঘড়া,ভাগ্যকুল এলাকায় অসংখ্য ফসলি জমি কাটা
বন্ধ করেছে উপজেলা প্রশাসন।আড়িয়াল বিলে কৃষি জমি রক্ষায় কেন অবৈধ মাটি খনন ও বিক্রী বন্ধে কোন ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছেনা তার সদূত্তর খুজে পাচ্ছেন না বিলের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ
কৃষক। ভিতরে ভিতরে কৃষকের চাপা ক্ষোভ বাসা বাধলেও তারা জিম্মী ভূমি দস্যু চক্র গুলোর নিকট। অনেক সময় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কৃষক কে দস্যুদের জমি দিতে হচ্ছে।স্হানীয়
কতিপয় গণমাধ্যম কর্মী ও প্রশাসনের সংযোগ থাকার ফলে বার বার ভূমি দস্যুরা পার পেয়ে যাচ্ছে।সরজমিন পরিদর্শন করলে প্রকৃতি ও কুষি বান্ধব যে কারও চক্ষে এটা কে ধ্বংস যজ্ঞ মনে হবে।
অনতবিলম্বে আড়িয়াল বিলে মাটি লুট বন্ধ করে ভূমি দস্যু চক্র গুলোর বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্হা গ্রহনের লক্ষে উপজেলা সহকারী কমিশনার ((ভূমি),উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্হানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন লাখ লাখ কৃষক। সবুজ প্রকৃতি,উত্তম ফসল ও কৃষি জমি রক্ষায় সক্রিয় হওয়া সময় ও প্রকৃতির দাবি।