রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
spot_img
Homeআইন-অপরাধসুনামগঞ্জ সীমান্তে “ঈদকে সামনে রেখে” চোরাকারবারীরা বেপরোয়া, গ্রেফতার ৫

সুনামগঞ্জ সীমান্তে “ঈদকে সামনে রেখে” চোরাকারবারীরা বেপরোয়া, গ্রেফতার ৫

আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একাধিক মামলার

আসামীরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে গরু, ছাগল, কয়লা, পাথর, বালি, চিনি, পান-সুপারী, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, শাড়ী-কাপড়, ইয়াবা ও মদসহ আরো বিভিন্ন প্রকার পন্য পাচাঁরের উৎসবে মেতে উঠেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- আজ রবিবার (১১ জুন) ভোরে জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে ভারত থেকে গরু পাচাঁরের সময় অভিযান চালিয়ে ১টি গরু আটক করেছে বিজিবি সদস্যরা।

এরআগে লাউড়গড় সীমান্তের যাদকাটা নদীতে অবৈধ ভাবে পাথর পাচারের সময় বালি ও পাথর বোঝাই ১টি স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকাসহ যুবরাজ ও আক্তার হোসেনকে গ্রেফতার করে টুকেরবাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।

অন্যদিকে ছাতক উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ৩লাখ ৯০হাজার টাকা মূল্যের ৬৫বস্তা চিনি ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাচাঁর করে ২টি পিকআপ ভ্যান বোঝাই করে পাশে জগন্নাথপুর উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার সময় ডরেরপাড় নামকস্থানে

অভিযান চালিয়ে পিকআপ চালক জাহিদ হাসান (২৩), প্রদীপ দেবনাথ (২৫) ও চোরাকারবারী নির্দন দেবনাথ (৩০) কে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। কিন্তু চোরাকারবারীদের গডফাদার কামড়াবন্দ গ্রামের হাবিব সারোয়ার (তোতলা আজাদ)

এর নেতৃত্বে তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা ও চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা, লালঘাট বড় মসজিদ এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম মিয়া, মানিক মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া,

খোকন মিয়া, রুবেল মিয়া, আদাম আলী, জামির আলী, সুহেল মিয়া, সুলতান মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবুল, হারুন মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, নেকবর আলী ও রফ মিয়াগং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে

২০মেঃটন কয়লা ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে ৭টি বারকি নৌকা দিয়ে চুনখলার ব্রীজ সংলগ্ন সমসার হাওর ও বোরাঘাট নিয়ে স্টিলবডি ইঞ্জিনে নৌকা বোঝাই করে।

পরে পাটলাই নদী দিয়ে ওপেন নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানা সামনে অবস্থিত মনতলা ডিপুতে নিয়ে বিক্রি করে।

এরআগে গত শনিবার (১০জুন) রাত সাড়ে ১২টায় ১৮মেঃটন ও শুক্রবার (৯ জুন) ভোরে ২৫ মেঃটন কয়লাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে চোরাকারবারীরা।

অপরদিকে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধেরআউটা গ্রামের বিভিন্ন বসতবাড়ির ভিতরে শতশত মেঃটন চোরাই কয়লা মজুত করছে চোরাকারবারী মনির মিয়া ও জিয়াউর রহমান জিয়াগং।

এছাড়া টেকেরঘাট সীমান্তের নীলাদ্র লেকপাড়, বুরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে ইসাক মিয়া, কামাল মিয়া ও রফিকুল মিয়া নেতৃত্বে ভারত থেকে কয়লা পাচার করে বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করা হচ্ছে।

এজন্য পাচাঁরকৃত প্রতি বস্তা কয়লা থেকে টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির নামে ৭০টাকা, তাহিরপুর থানা পুলিশের নামে প্রতিটনে ১হাজার ৫শত টাকা ও সাংবাদিকদের নামে ১হাজার টাকাসহ ডিবি পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে মোটা

অংকের চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারী রতন মহলদার, ইয়াবা কালাম, ইসাক মিয়া, মনির মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, খোকন মিয়া ও রফ মিয়া। পরে উত্তোলিত চাঁদার টাকা নিয়ে যাওয়া হয় তাদের গডফাদার তোতলা আজাদের

কামড়াবন্দ গ্রামের বাড়ির অন্দর মহলে। সেখানে হয় ভাগ ভাটোয়ারা। কিন্তু এব্যাপারে নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। অথচ তাহিরপুর থানায় সাবেক ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার কর্মরত থাকাকালীন সময় অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত

কয়লা, মদ, ইয়াবা, তক্ষক ও ইঞ্জিনের নৌকাসহ উপরের উল্লেখিত চোরাকারবারী ও সোর্সদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে মাদক ও চোরাচালান বাণিজ্য আবারো বেড়ে যায়।

তবে সম্প্রতি চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পে নায়েক সুবেদার খাদিমুল ইসলাম যোগদান করে উপরের উল্লেখিত চোরাকারবারী ও তোতলা আজাদের পাচাঁরকৃত প্রায় ২শত মেঃটন অবৈধ কয়লা, সুপারী ও গরুসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছেন।

এঘটনার প্রেক্ষিতে গডফাদার তোতলা আজাদের নেতৃত্বে গত ১১ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে সীমান্তের কলাগাঁও মাইজহাটি মোড়ে বিজিবির বিরুদ্ধে চোরাকারবারীরা মানববন্ধন করে।

এঘটনায় বিজিবি বাদী হয়ে তোতলা আজাদসহ তার বাহিনীর ১১জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দিলেও, তোতলা আজাদের নাম বাদ দিয়ে থানায় মামলা এফআইআর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

একই ভাবে চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোছড়া, রাজাই, কড়ইগড়া, বারেকটিলা ও লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, সাহিদাবাদ, পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা, পাথর, নাসিরউদ্দিন ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন

মালামাল পাচাঁর করে, লাউড়গড় ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত যাদুকাটা নদীতে নৌকা বোঝাই করে নদীপথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পাথর পাচাঁর করে প্রকাশ্যে মজুত করা হচ্ছে লাউড়গড় ক্যাম্পের আশেপাশে এবং ৩০টি অবৈধ

পাথর ভাংগার মিলে। এব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করলে লাখলাখ টাকা মূল্যের অবৈধ পাথর ও কয়লা জব্দ করা সম্ভব হতো জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এব্যাপারে চারাগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার খাদেমুল ইসলাম বলেন- আমার সীমান্ত এলাকায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে অবৈধ মালামাল জব্দ করছি।

তবে পাশের বালিয়াঘাট ক্যাম্পের সহযোগীতা পেলে চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করতে সহজ হতো। কারণ আমার সীমান্ত এলাকায় চোরাদের ধাওয়া করলে অবৈধ মালামাল ও নৌকা নিয়ে চলে যায় ঐ সীমান্তের ভিতরে।

বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার রাজ্জাক বলেন- ক্যাম্পের সোর্স হিসেবে করা কাজ করে আমার জানা নাই। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাব।

টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার মোতালিব বলেন- সোর্স ইসাক ও অন্যাদের সাথে আমার এখনও পরিচয় হয়নি। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, সাংবাদিক ও পুলিশের নাম ভাংগিয়ে অনেকেই চাঁদাবাজি করতে পারে। তবে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ