মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, নোয়াখালীর সেনবাগে সোমবার ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামের ফকির বাড়িতে পরকীয়া প্রেমিক নিয়ে স্বামী মহিন উদ্দিন (৪৫)কে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত
স্ত্রী রজ্জবের নেছা প্রকাশ রিনা (৩৫) হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধী দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইকবাল হোসাইনের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় ওই জবানবন্দি প্রদান করেন। এঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিক মোঃ মাসুদ পলাতক রয়েছে।
নিহত মোঃ মহিন উদ্দিন উপজেলার ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের হরিণকাটা গ্রামের ফকির বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে।সে চট্রগ্রামের ধনিয়ালাপাড়া এলাকায় নিজের একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন।এঘটনায় নিহতের মা
রাহেলা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে আসামি করে সেনবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪ তারিখ ৭/৮/২৩ইং।
এর আগে,রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামে ফকির বাড়িতে ওই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।মঙ্গলবার ৮ আগস্ট ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামির বরাতে তিনি বলেন, নিহত মঈন উদ্দিন তার ব্যবসার কাজে প্রায় চট্রগ্রাম শহরে থাকতেন। এ সুযোগে গত
২-৩ বছর ধরে তার স্ত্রী রজ্জবের নেছা বাড়ির পাশের মোঃমাসুদ (৩৫) নামে এক যুবকের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে তারা পরস্পর অসংখ্যবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়।
একপর্যায়ে বছর খানেক আগে রজ্জবের নেছাকে তার স্বামী তালাক দিয়ে দেয়। তালাক দেওয়ার ফলে সে স্বাভাবিক ভাবে বাবার বাড়ি চলে যায়। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান থাকায় তাদের দিকে তাকিয়ে তাকে পুনরায় সামাজিক ভাবে
স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আসার পরও তার চরিত্রর পরিবর্তন ঘটেনি। এরপরও বিভিন্ন সুযোগে সে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক চালাতে থাকে। স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদের সাথে নিহত মহিন উদ্দিনের
বড় ধরনের শক্রতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ একাধিকবার রজ্জবের নেছার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয়। মঈন উদ্দিন বাড়িতে এলে বিষয়টি সহ্য করতে পারতোনা পরকীয়া প্রেমিক। এই জন্য তাকে মেরে ফেলার জন্য তার
স্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে সে। গত ৩-৪দিন আগে এই নিয়ে পরকীয়া প্রেমিকসহ মহিন উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে রজ্জবের নেছা। এরপর নিহত মহিন গ্রামের বাড়িতে এলে নিয়মিত গরুর দুধ পান করত। ঘটনার
আগের দিন পরকীয়া প্রেমিক রজ্জবের নেছাকে ১৪-১৫টি ঘুমের ওষুধ সরবরাহ করে। গত রোববার রাত ৯-১০টার দিকে দুধের সাথে মিশিয়ে সে তার স্বামীকে সবগুলো ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। এত গুলো ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে সে
অচেতন হয়ে যায়। একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ ও রজ্জবের নেছা অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে মহিন উদ্দিনকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির উঠানে নিয়ে মাথায় কুপিয়ে হত্যা করে। পরে বাড়ির উঠানে স্বামীকে মুর্মূর্ষু
অবস্থায় ফেলে রেখে ঘরে ঢুকে উল্টো নাটক সাজায় ঘাতক স্ত্রী চিৎকার করলে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার প্রথমে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে নোয়াখালীর প্রাইম হসফিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের মা রাহেলা আক্তার (৬০) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সেনবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।মামলা নং-৪ তারিখ-৭/৮/২৩ইং । এঘটনায় পুলিশ ১৮ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্ত স্ত্রীকে গ্রেফতার করে নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। একই সাথে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে।