সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
spot_img
Homeআইন-অপরাধতাহিরপুর সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান ও মৃত্যু: লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি

তাহিরপুর সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান ও মৃত্যু: লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বেড়েছে চোরাচালান বাণিজ্য। বেশি লাভের আশায় অবৈধ পথে কয়লা ও পাথর পাচাঁর করতে গিয়ে সীমান্তের নদীতে ডুবে ও চোরাই কয়লার গুহার ভিতর মাটি চাপা পড়ে ইতোমধ্যে ২জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

তারপরও থেমে নেই চোরাকারবারীরা। তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রতিদিন বাংলা কয়লাসহ ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাথর, চোরাই কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- গতকাল মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাত ১১টা থেকে আজ বুধবার (৯ আগস্ট) ভোর ৫টায় পর্যন্ত চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা ও বিজিবি ক্যাম্পের পূর্বে অবস্থিত সমসারপাড় গ্রাম থেকে শতাধিক ইঞ্জিনের

নৌকা বোঝাই করে ভারত থেকে পাচাঁরকৃত অবৈধ চোরাই কয়লা ও হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বাংলা কয়লা নিয়ে গেছে স্থানীয় চোরাকারবারীরা। এরআগে গত সোমবার (৭ আগস্ট) রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ভোর ৫টা

পর্যন্ত এই সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি ও কলাগাঁও এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক নৌকা বোঝাই করে বাংলা ও চোরাই কয়লাসহ চুনাপাথর পাচাঁর করা হয়। অথচ চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পে নায়েক সুবেদার খাদিমুল ইসলাম কর্মরত থাকাকালীন

অভিযান চালিয়ে একমাসে ১৫০মেঃটন অবৈধ কয়লাসহ সুপারীর চালান, গরু ও মদ আটক করেছেন। থানায় মামলা দিয়েছেন স্থানীয় চোরাকারবারীগংদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে চারাগাঁও সীমান্তে চোরাচালান

ওপেন হয়ে যায়। অন্যদিকে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্ত যুগযুগ ধরে রয়েছে অশান্ত। গত শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে এই সীমান্তের লাকমা এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁরের সময় গর্তে পড়ে আক্তার হোসেন (১৬) নামের এক

কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পুলিশ এদিন বিকেলে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এই সীমান্তে এই পর্যন্ত চোরাচালান করতে গিয়ে প্রায় ১৭জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও থেমে নেই চোরাচালান বাণিজ্য।

এদিকে বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে চোরাচালান একটু কম হলেও প্রায় দিনই কয়লা, পাথর ও চিনিসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ আসস্ট) ভোরে এই সীমান্তের বাগলী থেকে ২ নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৪০ মেঃটন অবৈধ চোরাই কয়লা ও নিষিদ্ধ বাংলা কয়লা পাচাঁর করে নিয়ে যায় মাকমুদ আলী নামের এক ব্যক্তি।

এছাড়া টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প ও বুরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন এলাকা দিয়ে প্রতিদিন কয়লা পাচাঁর করে নীলাদ্রী লেকপাড়সহ বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে বিক্রি করেছে চোরাকারবারীরা।

সম্প্রতি এই সীমান্তে বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে কয়লা পাঁচারের সময় বিএসএফের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এঘটনার পর টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে ইয়াহিয়া খান যোগদানের পর টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তে চোরাচালান কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তিনিও বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে চোরাচালান আবার বেড়ে যায়।

পাশের চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোঘাট, রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে কয়লা, চুনাপাথর, পান-সুপারী, নাসিরউদ্দিন বিড়িসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করা হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। অন্যদিকে গত বুধবার (২

আগস্ট) রাত ২টায় বহুল আলোচিত লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের সময় নৌকা ডুবে আব্দুল হাসিম (৩৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এই সীমান্তে কয়লা ও পাথরসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য

পাচাঁর করতে গিয়ে বিএসএফে তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবেসহ বিভিন্ন ভাবে এপর্যন্ত ২২জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি এই সীমান্তের চোরাচালান বাণিজ্য। বর্তমানে লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী তীর কেটে বালি বিক্রি করা থেকে শুরু করে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাথর ও কয়লাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর হচ্ছে বাঁধাহীন ভাবে।

এজন্য একাধিক মামলার আসামী সীমান্তের কলাগাঁও গ্রামের রফ মিয়া, সাইফুল মিয়া, জঙ্গলবাড়ি গ্রামের লেংড়া জামাল, হযরত আলী, চারাগাঁও গ্রামের আনোয়ার হোসেন বাবলু, সুলতান মিয়া, দুধের আউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান

জিয়া, তার ভাই মনির মিয়া, লালঘাট গ্রামের ইয়াবা কালাম মিয়া, লাকমা গ্রামের রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, চানপুর গ্রামের আবু বক্কর, সাহিদাবাদ গ্রামের বায়েজিদ মিয়া ও বাগলী গ্রামের হযরত আলীগং সোর্স পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক,

পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা চিনি থেকে ৪শত টাকা, প্রতি নৌকা অবৈধ কয়লা ও পাথর (২০-৩০মেঃটন) থেকে ৩০থেকে ৪৫হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সীমান্তবাসী।

এব্যাপারে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি শেখ মোস্তফা বলেন- সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বাংলা কয়লা ও চোরাই কয়লা এক সাথে মিশিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু

দেখার কেউ নাই। কলাগাঁও গ্রামের আইনাল মিয়া বলেন- প্রশাসন যেখানে নিরব কিছু বলেনা, আমি সেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যাই না। আমি অবৈধ কোন কাজের সাথে জড়িত না। তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি,

দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি কামাল হোসেন রাফি বলেন- সাংবাদিক ও প্রশাসনের নাম ভাংগিয়ে যারা দীর্ঘদিন যাবত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে, তাদের বিরোদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নিলে সীমান্ত চোরাচালান ও মৃত্যু কখনোই বন্ধ হবেনা।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মোতালিব খান বলেন- আমাদের ক্যাম্পের কোন সোর্স নাই। চোরারা চুরি করে কয়লা ও পাথর পাচাঁর করে। কিন্তু চারদিকে পানি থাকার কারণে তাদেরকে ধরতে

পারছিনা। লাউড়গড় ক্যাম্পে কর্মরত ডিএসবি কর্মকর্তা জাহিদ বলেন- পাথর ও কয়লা আনতে গিয়ে ২জনের মৃত্যুসহ অনেকেই সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে জানতে পেরেছি। আমাদের লোকবল কম থাকার কারণে

সীমান্ত এলাকার শতশত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন। তারপরও বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে আমরা কয়লা, পাথর ও মাদকদ্রব্য জব্দ করছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ