সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার ৬ উপজেলা সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। তারা সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে
ভারত থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, কাপড়, কমলা, চিনি, সুপারী, কয়লা, চুনাপাথর ও কসমেটিকসসহ ইয়াবা, মদ, গাঁজা, নাসিরউদ্দিন বিড়িসহ নানান প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে বাবা-ছেলেসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য। গ্রেফতারকৃতরা হলো- জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার নয়াহাটি
গ্রামের মৃত ছানা উল্লাহর ছেলে এখলাছ মিয়া (৩৯), একই গ্রামের মৃত কুদরত আলীর ছেলে ফজলুল হক (৫৮) ও তার ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (২৫)।
আজ সোমবার (৪ ডিসেম্ভর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে- গত রবিবার (৩ ডিসেম্ভর) দুপুরে বিশ্বম্ভর
উপজেলার নয়াহাটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১কেজি ২শ গ্রাম গাঁজাসহ চোরাকারবারী এখলাছ মিয়াকে তার নিজ বসতবাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে গত শনিবার (২
ডিসেম্ভর) রাতে ৯শ ৬০গ্রাম গাঁজাসহ একই গ্রাম থেকে মাদক ব্যবসায়ী ফজলুল হক ও তার ছেলে তোফাজ্জল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
অপরদিকে গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের শাহিদাবাদ বর্ডার হাটে সংলগ্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৬লাখ ৭০হাজার
টাকার মূল্যের পাচাঁরকৃত অবৈধ কমলা জব্দ করে বিজিবি ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। এরআগে এই সীমান্ত দিয়ে পাচাঁরকৃত অবৈধ ফুছকা ও কসমেটিস ঢাকা পাঠানোর সময় জগন্নাথপুর থানার
পুলিশ অভিযান চালিয়ে লাউড়গড়ের ২জন চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছিল। এব্যাপারে সীমান্তবাসী সূত্রে জানাযায়- লাউড়গড় সীমান্তের বডারহাট চালু হওয়ার পর সাধারণ
ক্রেতাদের চাইতে চোরাকারবারীদের চাহিদা বেশি বেড়েগেছে। স্থানীয় চোরাকারবারীরা সোর্স পরিচয়ধারী জসিম ও বায়েজিদসহ আরো একাধিক দালালের মাধ্যমে বিজিবি ও কাসস্টমসের
দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিয়মের চাইতে বেশি মালামাল সংগ্রহ করে। আর দীর্ঘদিন যাবত এই অনিয়ম চলার কারণে চোরাকারবারীদের দাপট দিনদিন বেড়েই চলেছে।
এছাড়াও এই সীমান্তের যাদুকাটা নদী, বারেকটিলা ও পুরান লাউড়সহ আরো একাধিক এলাকা দিয়ে অবাধে নাসিরউদ্দন বিড়ি, কসমেটিকস, গরু, পাথর, কয়লা, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা পাচাঁর করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল রবিবার( ৩ ডিসেম্ভর) রাত ১২টার পর টেকেরঘাট সীমান্তের রজনী লাইন ও বুরুঙ্গা ছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী আক্কাল আলী প্রায় শতাধিক লড়ি বোঝাই করে
ভারত থেকে চুনাপাথর ও কয়লা পাচাঁর শুরু করে। পরে বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থা বিএসবি ও ডিএসবির দায়িত্বে থাকা সদস্যদের সহযোগীতায় কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর বন্ধ করা হয়।
টেকেরঘাট ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কোম্পানী কমান্ডার আনোয়ার হোসেন যোগদানের পর থেকে সোর্স আক্কল আলী ও তার সহযোগী কামাল মিয়া এক ট্রলি চুনাপাথর (৩ মেঃটন) থেকে
২হাজার টাকা ও ১বস্তা কয়লা (৫০ কেজি) থেকে ১৫০টাকা চাঁদা নিয়ে রাতে টহলে থাকা বিজিজি সদস্যদের সাথে রেখে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করে। এছাড়া পাচাঁরকৃত চোরাই কয়লা
যখন ইঞ্জিনের নৌকায় বোঝাই করা হয় তখন আবারো ১মেঃটন চোরাই কয়লা থেকে ২হাজার ৩শত টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্সরা।
একই ভাবে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁরের পর সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম,
রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া ও হোসেন আলী প্রতি বস্তা কয়লা ও মাদক থেকে ৩৫০টাকা চাঁদা উত্তোলন করে পুলিশ, সাংবাদিক, ডিবি ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে।
অন্যদিকে বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তে পাচাঁরকৃত ১ মেঃটন চোরাই কয়লা থেকে বিজিবি ক্যাম্পের নামে ৮শত, থানার নামে ১ নৌকা (২০ মেঃটন) কয়লা থেকে ২৫ হাজার টাকা, টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির নামে ১বস্তা কয়লা থেকে ৭০টাকা ও ১ টন চুনাপাথর থেকে ১৫শত
টাকা চাঁদা উত্তোলন করে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী সোর্স রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, লেংড়া জামাল, হযরত আলী, আনোয়ার হোসেন বাবলু, শরাফত আলী ও শামসুল মিয়া।
পরে উত্তোলিত চাঁদার টাকা নিয়ে সোর্সরা তাদের গডফাদার তোতলা আজাদ মিয়ার অন্দর মহল কামড়াবন্দ গ্রামে যায়। সেখানে চোরচালান ও চাঁদাবাজির চাঁদার টাকা হয় ভাগভাটোয়ারা।
সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গত ৩বছর যাবত ওপেন চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে সোর্স ও তাদের গডফাদার কোটিপতি হয়েগেছে বলে জানা গেছে।
সোর্স পরিচয় দিয়ে চোরাচালান ও চাঁদাবাজির বিষয়ে তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই। কেউ যদি পুলিশের নাম ভাংগিয়ে চোরাচালান ও
চাঁদাবাজি করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক ও টেকেরঘাট বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য
জানার জন্য তাদের সরকারী মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও কেউ ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্বম্ভরপুর থানার এসআই মতিয়ার রহমান পৃথক অভিযানে মাদকসহ ৩জনের গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান- গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।