বুধবার, মে ৮, ২০২৪
spot_img
Homeআইন-অপরাধতাহিরপুর সীমান্তে কোটি টাকার অবৈধ মালামালসহ ৩ চোরাকারবারী গ্রেফতার

তাহিরপুর সীমান্তে কোটি টাকার অবৈধ মালামালসহ ৩ চোরাকারবারী গ্রেফতার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: চোরাকারবারী ও চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে সু-পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা। এখানকার একাধিক মামলার আসামীরা প্রশাসনের সোর্স পরিচয় দিয়ে এউপজেলার লাউড়গড়,

চাঁনপুর, টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও ও বীরেন্দ্রনগর এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন অবাধে পাচাঁর করছে কয়লা, চুনাপাথর, চিনি, সুপারী, গরু, ঘোড়া, হেরুইন, ইয়াবা, মদ, গাঁজা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, পেয়াজ,

কসমেটিকস, কাপড়, কমলা, মোটর সাইকেল ও অস্ত্র। এর ফলে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব থেকে বি ত হচ্ছে সরকার।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- আজ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় সীমান্ত চোরাকারবারী ফারুক আহমেদ (২০), হাবিবুর রহমান (২১) ও মিরাট মিয়া (৫৫)কে আদালতের মাধ্যমে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্ভর) ভোরে তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে যাদুকাটা নদীপথে ভারত থেকে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে মাদকদ্রব্য, গরু, কয়লা,

পাথর, কমলা, পেয়াজ, চিনি, সুপারী ও নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর শুরু করে সোর্স জসিম মিয়া, বায়েজিদ মিয়া ও গডফাদার তোতলা আজাদগং। এই খবর পেয়ে পুলিশ যাদুকাটা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১টি কাঠবডি ইঞ্জিনের নৌকাসহ ৩ চোরাকারবারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।

ওই সময় সোর্স ও তাদের গডফাদার সুকৌশলে পালিয়ে যায়। পরে নৌকা থেকে পাচাঁরকৃত ২২ কাটুন স্কিন সানরাইজ ক্রিম, ৩২ কাটুন ভেসলিন ক্রিম, ১৬ কাটুন জনসন বেবি শেম্পু, ১১ কাটুন ফ্রেস ক্রিম, ১৮ কাটুন

জনসন সফ, ৮০ পিস সার্ট, ১১৬পিস সানমেক্স থান কাপড়, ১৭৫ পিস এমজি থান কাপড় ও ১৮ পিস মেক লাক্সারি সুটের কাপড়সহ ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আর এসব অবৈধ মালামালের বাজার মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭শ ৬০টাকা।

অপরদিকে আজ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্ভর) ভোর থেকে অর্ধশতাধিক ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে টেকেরঘাট সীমান্তের বরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে চুনাপাথর ও কয়লা পাচাঁর শুরু করে পুলিশের সোর্স পরিচয়ধারী আক্কল আলী ও বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী কামাল মিয়াগং।

এছাড়াও একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম, হোসেন আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়াগং প্রতিদিন চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, কড়ইগড়া, নয়াছড়া, বারেকটিলা, টেকেরঘাট

সীমান্তের রজনী লাইন, বড়ছড়া, নিলাদ্রী লেকপাড়, চুনাপাথর খনিপ্রকল্প, লাকমা, লালঘাট এলাকা দিয়ে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবাধে কয়লা ও চুনাপাথরসহ মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে এবং পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল

থেকে পুলিশ, বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে করছে লাখলাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন। একই ভাবে বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তে একাধিক মামলার আসামী রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, হযরত আলী, সাইফুল

মিয়া, রিপন মিয়া, লেংড়া জামাল, শামসুল মিয়া, শরাফত আলী, আনোয়ার হোসেন বাবলু, নেকবর আলী ও তাদের গডফাদার তোতলা আজাদ করছে জমজমাট চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বাণিজ্য। কিন্তু সোর্স ও তাদের গডফাদারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি দিনদিন বেড়েই চলেছে।

এব্যাপারে পুটিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আনোয়ার হোসেনকে ম্যানেজ করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ৫হাজার মেঃটন কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করা হয়। লালঘাট গ্রামের চোরাই কয়লা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান ও খোকন মিয়া বলেন- থানা-পুলিশ,

বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল থেকে সোর্স দিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে গডফাদার তোতলা আজাদের কামড়াবন্দ গ্রামের অন্দর মহলে নিয়ে ভাগভাটোয়ারা করা হয়। সেখানে অবৈধ মোটর সাইকেল ও মাদকদ্রব্য বেচাকেনা হয়। তোতলা আজাদের ছেলে কিশোর গ্যাংলিডার

শিহাব শিপুকে সম্প্রতি চোরাই মোটর সাইকেলসহ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল বিজিবি।এছাড়া ইয়াবার চালানসহ তোতলা আজাদকে আটক করে গণধৌলাই দিয়েছিল স্থানীয় জনতা।

চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে তোতলা আজাদ রাতারাতি হয়েগেছে কোটিপতি। এবিষয়ে জানতে টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আনোয়ার হোসেনের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৮) নাম্বারে বারবার কল করার পরও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে লাউড়গড় ক্যাম্পের কমান্ডার সিদ্দিক

বলেন- সীমান্ত চোরাচালান ও পুলিশের হাতে কোটি টাকার মালামালসহ ৩জন চোরাকারবারী আটকের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবনা,এই বিষয়ে আমাদের সি ও স্যারের সাথে কথা বলুন। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক (সি ও) মাহবুবুর রহমানের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬০৩১৩০) নাম্বারে একাধিক বার

কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- সীমান্ত এলাকায় থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই, তবে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিজিবির।

কিন্তু চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে জানতে পেরে গোপন সংবাদের ভিত্তি আমরা অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার ভারতীয় অবৈধ মালামালসহ ৩জন চোরাকারবারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছি। এঘটনার প্রেক্ষিতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ