বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের অনুমতি পায়নি তাঁর পরিবার। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এসংক্রান্ত আবেদন নাকচ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল রবিবার সকালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামতসংবলিত নথি পাওয়ার পর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত জানায়।দেশের প্রচলিত আইনে সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামির বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ না থাকায় সরকার খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামত বেআইনি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে তাঁর সাজা স্থগিত রেখে শর্তসাপেক্ষে বাসায় রেখে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
ওই আবেদন মঞ্জুর করার সঙ্গে সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, তার আর কার্যকারিতা নেই। তাই নতুন করে অর্থাৎ দ্বিতীয়বার ৪০১ ধারার আবেদন মঞ্জুর করার বা খোলার আর সুযোগ নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমাদের আইন অনুযায়ী যেটুকু করণীয় আমরা সেটুকু করছি। যেখানে মানবতার প্রশ্ন এসেছে, সেটাও আমরা করেছি। বিএনপি আবেদন করতেই পারে। আইনের বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’
এদিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় খালেদা জিয়ার পাসপোর্টও এখন আর নবায়ন হচ্ছে না বলে জানা গেছে।দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন।
দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় পরিবারের আবেদনে সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত রেখে তাঁকে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। গত বছর ২৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান।
শর্ত ছিল তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে বা বিবৃতি দিতে পারবেন না। এ শর্ত মেনেই এত দিন গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ২৭ এপ্রিল তাঁকে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
গত ৫ মে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে লিখিত আবেদন দেন।
ওই দিন রাতেই আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। গত চার দিন ধরে নানা প্রক্রিয়া শেষ করে গতকাল সকালে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কিন্তু গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, সেটা সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
কেন অনুমতি দেওয়া হলো না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার একটি আবেদন করেছিলেন।
সে আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। আইনের বাইরে গিয়ে বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করতে পারছি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে সুবিধামতো চিকিৎসা গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শর্ত ছিল যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না বা বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। এরপর মুক্তি পেয়ে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং বাসায়ই অবস্থান করছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ কভিডে আক্রান্ত হওয়ায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তাঁর ছোট ভাই আবার একটি আবেদন করেন তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মত এসেছে। সেই মতামতের ভিত্তিতে তাঁর আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁদের আমরা এটাই জানিয়ে দেব।’