সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও সীমান্তে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সোর্সরা ভারত থেকে প্রতিদিন কয়লা পাঁচার করছে। এরপর পাচাঁরকৃত অবৈধ কয়লা থেকে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে করছে চাঁদা উত্তোলন।
গত ১১ জুলাই বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী লেংড়া বাবুল ও তার ৩ সহযোগীকে গ্রেফতারের পর সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক যাবত এই সীমান্ত দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- আজ রবিবার (২২ আগষ্ট) ভোরে বালিয়াঘাট সীমান্ত থেকে সোর্স ইয়াবা কালাম ২ নৌকায় বোঝাই করে প্রায় ৩০ মেঃটন কয়লা ভারত থেকে পাঁচার করে একদিলের মাধ্যমে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলা সদরের মনতলা নদীর তীরে অবস্থিত কয়লা ব্যবসায়ী আজিজ মিয়া ও সাজু মিয়ার ডিপুতে নিয়ে বিক্রি করে।
যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া আরো ২ নৌকা কয়লা (২৫মেঃটন) পাচাঁরের অপেক্ষায় রয়েছে। অপরদিকে সোর্স রমজান মিয়া ও শফিকুল ইসলাম ভৈরবের নেতৃত্বে চোরাকারবারী শহিদুল্লা, খোকন মিয়া, কুদ্দুস মিয়া, বাবুল মিয়া ২ নৌকায় বোঝাই করে ২৫ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে একই জায়গাতে নিয়ে বিক্রি করে।
প্রতিদিন লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়লা ও মাদক পাচাঁরের জন্য বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, বাঁশতলা, লালঘাট, লাকমা ও টেকেরঘাট এলাকায় বড়ঘাট, মাঝেরঘাট, দৌড়ের ঘাটসহ ১০ থেকে ১৫টি চোরাই কয়লার গুহা ও চোরাই পথ তৈরি করেছে সোর্স ইয়াবা কালাম, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব ও লেংড়া জামাল।
আর পাচাঁরকৃত কয়লা ও মাদক পরিবহণের জন্য চোরাকারবারী খোকন মিয়া ৩টি, শহিদুল্লাহ ১টি, কাসেম মিয়া ১টি ও শফিকুল ইসলাম ভৈরব ১টিসহ ৮টি ইঞ্জিনের নৌকা তৈরি করেছে।
এসব সোর্সদের মধ্যে ইয়াবা কালাম ও তার গডফাদারের বিরুদ্ধে বিজিবি কর্তৃক থানায় ইয়াবা, মদ, হুন্ডি, কয়লা ও ভারতে অবৈধ ভাবে লোক পাচাঁরসহ একাধিক মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় সোর্স কালাম অনেকবার জেল হাজতে গেলেও তার গডফাদার রহস্যজনক কারণে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। একারণে তারা সীমান্ত এলাকায় সিন্ডিকেডের মাধ্যমে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে ইতিমধ্যে হয়েগেছে কোটিপতি। তাদের সিন্ডিকেডের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে লালঘাট গ্রামের কুদ্দুস মিয়া, বাবুল মিয়া, মানিক মিয়া, হারুন মিয়া, জসিম মিয়া, দুধের আউটা গ্রামের সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া, ইসলাম উদ্দিন, লাকমা গ্রামের করিম মিয়া, হারুন মিয়া, মানিক মিয়া, ইসব আলী, নুর আলী, নেকবর আলী, বজর আলীসহ আরো অনেকেই।
এব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালঘাট ও লাকমা গ্রামের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন- ভারত থেকে পাঁচারকৃত ১বস্তা চোরাই কয়লা থেকে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের নামে ৫০টাকা, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের নামে ৩০টাকা ও সোর্স কালামের নামে ১০টাকাসহ চারাগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার দিলোয়ার ও এফএস রিপনের নামে এক নৌকা (১০ মে.টন) চোরাই কয়লা থেকে ৬হাজার টাকা, সাংবাদিকদের নামে ৩হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে সোর্স ইয়াবা কালাম ও রমজান মিয়া।
তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি দৈনিক সিলেটের ডাকের তাহিরপুর প্রতিনিধি রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ ও সহ-সভাপতি দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিনিধি বাবরুল হাসান বাবলু বলেন- সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধ ভাবে ভারত থেকে রাতের আধারে কয়লা পাচাঁর করছে আবার সাংবাদিকদের নামে বদনাম সৃষ্টি করছে তাদেরকে শীগ্রই আইনে আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তাহিরপুর সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান করিব বলেন- ভারত থেকে বৈধ ভাবে কয়লা ও পাথর আমদানীর জন্য এখানে ৩টি শুল্কষ্টেশন রয়েছে। তারপরও যারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে চোরাই পথে কয়লা, পাথর ও মাদকসহ অন্যান্য মালামাল পাচাঁর করছে তাদের ব্যাপারে শীগ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন।