কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভূমি দখলবাজ ও সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে বাড়ি ভিটে ছাড়া হয়েছেন এক অসহায় নারী। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজ বসতভিটায় থাকতে না পেরে তা সরকারের উন্নয়ন মূলক কোন কাজে বা সামাজিক মহৎ কোন কাজে দান করে দিতে চান ওই নারীর পরিবার।
এ ঘটনায় নির্যাতিত পরিবারটি রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ আকুতি জানান।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তবে নুর জাহান মোরসালিন সীমা (৪৩) জানান, ২০১২ সালের ২৯ মে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অন্তপুর গ্রামের মামা শ্বশুর আমিরুল ইসলাম চাঁদ ও মহিউল ইসলাম সাজুর কাছ থেকে তিনি ২৬ শতক জমি ক্রয় করেন।
এরপর নিয়ম অনুযায়ী ওই জমি খারিজ করে নিজ নামে নেন। তারপর থেকে বসবাস করে আসছেন। ২০১৮ সালে এসে অপর এক মামা শ্বশুর আজিজুল ইসলাম মুকুল ওই জায়গায় তার অংশ আছে বলে দাবী করেন। ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই শুরু।
তিনি বলেন, এরপর আজিজুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়ার জন্য ধাপে ধাপে প্রায় ২ লাখ টাকা সীমার কাছ থেকে নেন। এরপর নানা তালবাহনা করে মামা শ্বশুর মুকুল, সাজু ও সামছুল গং বিভিন্নভাবে ভূক্তভোগী পরিবারের উপর অত্যাচার চালাতে থাকেন।
সীমার স্বামী ঢাকায় চাকুরীর সুবাদে তিনিসহ পরিবারের লোকজন ঢাকায় অবস্থান করাকালীন সময়ে মুকুল গং বসতভিটার দখল নিতে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে সেখানে থাকা একাধিক গাছ কেটে ফেলেন এবং ভূক্তভোগীর বসতঘর দখল করে নেন।
এ ঘটনায় মামলা করায় মুকুল ও সামছুল গং আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২০ সালের আগষ্টে সীমার উপর হামলা চালিয়ে আহত করাসহ শ্লীলতাহানী করেন। এ ঘটনায় সীমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এছাড়া নুর জাহান মোরসালিন সীমা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং থানার ওসির কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষকে নিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মিটিং করে থানা পুলিশ বিষয়টি মিমাংসা করে দেন
। মুকুল ও সামছুল গং পুলিশের সামনে মিমাংসা মেনে নিলেও পরবর্তীতে তারা তা রক্ষা করেনি। এরপর প্রশাসনের পরামর্শে ভূক্তভোগী সীমা আদালতে মামলা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর মুকুল ও সামছুল গং আমাকে (সীমা) মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকেন।
এদিকে মামলার কাজে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কুড়িগ্রামে গেলে সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নিকুঞ্জ স্কুলের গেটের সামনে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করাকালীন সময়ে তিনজন সন্ত্রাসী এসে তাকে পিস্তল দেখিয়ে গুলি করার হুমকি দেন এবং মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করাসহ ওই বসত ভিটা ছেড়ে দিতে বলেন।
সেই থেকে জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন তিনি। রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নুর জাহান মোরসালিন সীমা কান্না জড়িত কন্ঠে আকুতি জানিয়ে বলেন, আপনারা সবাই মিলে হয় ওই জায়গাটি বিক্রি করে দেন।
না হলে সরকারের উন্নয়ন মূলক কোন কাজে বা সামাজিক কোন মহৎ কাজে দান করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন, এতেও আমি শান্তি পাব। তবুও মামা শ্বশুর মুকুল ও সামছুল গংদের হাত থেকে আমাদের পরিবারকে রক্ষা করেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নুর জাহান মোরসালিন সীমার স্বামী গোলাম সরোয়ার মোরসালিন টুটুল, জমি বিক্রেতা অপর এক মামা শ্বশুর আমিরুল ইসলাম চাঁদ।