মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
spot_img
Homeকৃষিকুড়িগ্রামে করোনাকালেও মাশরুম চাষ করে সারা ফেলেছে যুবক

কুড়িগ্রামে করোনাকালেও মাশরুম চাষ করে সারা ফেলেছে যুবক

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামে করোনা মহামারিতেও মাশরুম চাষ করে সাফল্য পেয়ে বেশ সারা ফেলেছেন যুবক আমিনুল ইসলাম। উত্তরের এই জনপদে মাশরুম চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মাশরুম বাজারজাত করা এবং মাশরুমের উপকারিতা প্রচার বৃদ্ধি পেলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মাশরুম বড় ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের।

মাশরুম খামারী আমিনুল ইসলাম মিলন জানান,কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় সড়ক কাটা গ্রামের বাসিন্দা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের করতেন চাকুরি। কিন্তু গত বছর করোনার থাবায় সেই চাকুরিটি হারাতে হয় তাকে। উপার্জনের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় তার। বিপাকে পড়তে হয় তাকে। অলস দিন কাটাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরুম চাষ বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসে বগুড়ায় বেসরকারিভাবে মাশরুম চাষের উপর ১৫দিনের প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

ডিসেম্বর মাসেই নিজ বাড়িতে প্রায় সোয়া লাখ টাকা খরচ করে ৩০ফুটের একটি টিনের ঘর নির্মাণ করেন। সেখানে মাশরুমে ৬শ স্পন দিয়ে শুরু করেন মাশরুম উৎপাদনের কার্যক্রম। মাত্র দু’মাসের মাথায় ফেব্রুয়ারিতেই মাশরুমের ফলন পেতে শুরু করেন। প্রথম ফলনেই প্রায় ৭০হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেন আমিনুল ইসলাম। বর্তমানে তার মাশরুমের স্পন রয়েছে প্রায় ১২শ টি। একটি স্পন থেকে ১৫/২০ দিনের মধ্যেই মাশরুম উৎপাদন শুরু হয় যা ৩মাস পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। ঢাকা,সিলেট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তার মাশরুম নিয়ে যায় গ্রাহকরা। অনলাইনেও মাশরুম বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি আরো বলেন,মাশরুমের উপকারিতা বিষয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচার করা গেলে এই মাশরুম উৎপাদন অনেক বেকার ভাই-বোনরা স্বাভলম্বি হতে পারবেন। এতে করে দরিদ্র জেলার অর্থনৈতিক চাকার স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।

মাশরুম খামারের দিনমজুর মজিবর বলেন,আমিনুল যে মাশরুম চাষ করাতে আমার একটা স্থায়ী কাজের সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিন এখানে কাজ করে ৩/৪শ টাকা আয় হচ্ছে। এতে করে বেশ ভালোই চলছে সংসার। স্থানীয়ভাবেও প্রতিবেশিসহ বন্ধুরা মাশরুমের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বেশ মাশরুম বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেশিরা প্রথমে মাশরুম খেতে না চাইলেও পরবর্তিতে এর উপকার জানতে পেরে অনেকেই কিনে নিয়ে মাশরুম খাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, মাশরুম একটি মৃতজীবী ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ। মাশরুমে মধ্যে রয়েছে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন এবং মিনারেলের সমন্বয় আছে। যা শরীরের ‘ইমুন সিস্টেম’কে উন্নত করে। মাশরুমে আছে শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভষ্টটিন এবং এনটাডেনিন। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে। এছাড়াও মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ডি। যা শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকারী। মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও লৌহ। ফলে মাশরুম খেলে রক্ত শূন্যতা দূর হয়।

মাশরুমে বি-ডি গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়ডে এবং বেনজো পাইরিন। এটি ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকার রাখে। গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত মাশরুম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার হয়ে উঠছে মাশরুম। মাশরুম প্রতিদিন নূন্যতম ১ চা চামচ গুড়া মাশরুম বা মাশরুম পাউডার স্যুপ,চা,কফি,হরলিক্স,গরম দুধ,গরম পানি,লাচ্চি, শরবত, ডাল, তেঁতুলের চাটনি, রুটির আটার সাথে মিশিয়ে অথবা যে কোন তরকারি সাথে মিশিয়ে মাশরুম খাওয়া যায়। এমন হাজারো গুণাগুণ সম্বলিত মাশরুম বাজারজাত করণে নেই কোন তেমন উদ্যোগ। এটি সরকারি-বেসরকারিভাবে বাজারজাত করা গেলে জেলায় মাশরুমের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে করে দারিদ্রপীড়িত খ্যাত জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে মনে করেন তিনি।

কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এটি তরকারি হিসেবে সাধারণ মানুষ খেতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাশরুম উৎপাদন করছেন আমিনুল। সে অনলাইনের মাধ্যমে মাশরুম বাজারজাত করছেন। মাশরুম ২শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়ে থাকে। বর্তমানে আমিনুলের প্রায় ১২শ স্পন রয়েছে। এখান থেকে একমাসেই আমিনুল আরো ৮০হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করতে পারবে। আমিনুলের সাফল্য দেখে অনেকেই মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ