কুড়িগ্রামে জনপ্রতিনিধিদের গ্রাম্য রাজনীতির প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে এবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলো ৪শ সুবিধাভোগী পরিবারের সহস্রাধিক বেশি সদস্যের। উপজেলা প্রশাসন বলছে লিখিত অভিযোগ থাকায় তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন সরকারের দেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় উপজেলা প্রশাসনে।
আর এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইউনিয়নের ৪০দিন মাটিকাটা কর্মসূচির কাজের মজুরি জোটেনি ৩৬৫টি পরিবারের। ফলে এই পরিবার গুলোর সহ¯্রাধিকেরও বেশি সদস্যের ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। এমনই করুণ দশা এবার ইউনিয়নের রতিকানি পাড়ার ষাটোর্ধ্ব মমিনা বেওয়া।
স্বামী মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়ে আলাদা থাকায় একাই চলতে হয় মমিনা বেওয়াকে। বিধবা এই নারী সরকারের গ্রামীণ উন্নয়নের ৪০দিনের কর্মসূচিতে মাটি কাটার কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই চলে তার জীবন।
রমজান মাসে ৪০দিনের মাটি কাটার কাজ করলেও এবার মজুরি না পাওয়ায় ঈদ আনন্দ নেই তার। খেয়ে না খেয়ে পুরাতন ছেড়া কাপড়-চোপড়েই ঈদ পার করতে হচ্ছে।
একই দশা রতিসোলাগাড়ি পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা রাহিয়া বেওয়া। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে ভিটে মাটি হারিয়ে বাঁধেই কোন রকমে পরিবারের ৭সদস্য নিয়ে বসবাস।
রাহিয়া বেওয়া এবং তার মেয়ে ইসোয়ারা বেগম এই মাটি কাটার কাজ করে সংসার চালায়। মজুরি পেয়ে ঈদের পোশাক কিনে দেবেন সন্তানদের। ঈদের দিন খাবেন ভালো মন্দ খাবার।
কিন্তু মজুরি না পেয়ে চোখে মুখে এখন হতাশার ছাপ পরিবারটির মুখে। এমন দুর্দশা বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৪০দিন কর্মসূচির সকল শ্রমিকদের। এখন ঈদে ধারদেনা কিংবা মানুষের দেয়া দানেই পার করতে হবে ঈদ।
মোছা. মমিনা বেওয়া( ৫০)জানান, আশা ছিলো মজুরি পেয়ে ঈদের পোশাক কিনতে পারি নাই। কিন্তু এই কোমলমতি শিশুদের নেই ঈদ আনন্দের চিহ্ন ছিলো না।
যেখানে অন্যান্য শিশুরা ঈদে নতুন পোশাকে পড়েছে সেখানে ৪০দিন কর্মসূচির শ্রমিকরা পুরাতন পোশাক দিয়ে ঈদ করতে হয়েছে।
শ্রমিক সরদার আমিনুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ভিলেজ পলিটিক্স বা গ্রাম্য রাজনীতির প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে ৪০দিন কর্মসূচির শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ মলিন হয়েছে।
সাবেক এক মেম্বার আবুল কালাম আজাদের লিখিত অভিযোগের কারণে ইউনিয়নের ৪০দিন কর্মসূচির সকল শ্রমিকদের মুজরি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি দিন কাজের জন্য ২শ টাকা করে একজন শ্রমিক ৮হাজার টাকা পাবার কথা থাকলেও ঈদ উপলক্ষ্যে পাইনি কোন মজুরি।
ফলে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। ৬নং ওয়ার্ড,বিদ্যানন্দ ইউপি মেম্বার আমিনুর ইসলাম জানান, প্রতিহিংসার কারণে সাবেক মেম্বারের দেয়া লিখিত অভিযোগের কারণে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৪০দিন কর্মসূচির সুবিধাভোগী মজুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত করে দ্রুত শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হবে।