বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
spot_img
Homeপাঠকের কলামডাক পিয়নের কদর নেই, ডাক বাক্সের যত্ন নেই

ডাক পিয়নের কদর নেই, ডাক বাক্সের যত্ন নেই


তৌফিক হাসান, সুজানগর, পাবনা: তথ্য প্রযুক্তি এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটায় এখন আর কেউ ডাক পিয়নের খবর রাখেন না। এমনকি এক সময়ের প্রিয় ডাক বাক্সের প্রতিও এখন আর কেউ নজর দেননা। ভার্চুয়াল জগতের সুবিধায় কোনঠাসা হয়ে পড়েছে একসময়ের ব্যস্ততম ডাক পিয়ন।

অথচ বেশি দিন আগের কথা নয়, অধিকাংশ পরিবার কাক ডাকা ভোরে প্রিয়জনের হাতের একটি চিঠি বা অন্য কোন পত্রাদির জন্য ডাক পিয়নের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতেন। শুধু তাই নয়, মানুষ তখন প্রিয়জনদের খবর জানতে বা তার লেখা একটি চিঠি পাবার আশায় সকালে বিকালে ডাক পিয়নের বাড়িতে ছুটে যেতেন। এর পরও যখন আপনজনদের কোন চিঠি বা সংবাদ পেতেন না তখন তারা তাদের সেই চিঠির জন্য ডাক পিয়নকে বার বার অনুরোধ করতেন পোস্ট অফিসে খোঁজ নিতে ।

বিশেষ করে ওই সময় যাদের আত্মীয়স্বজন বিদেশ থাকতেন তাদের কাছে ডাক পিয়নের কদরই ছিল আলাদা। তাছাড়া ডাক পিয়নও সে সময় প্রাপকের হাতে বিদেশী কোন চিঠিপত্র তুলে দিতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। কারণ তিনি বিদেশী কোন চিঠি প্রাপকের হাতে তুলে দিতে পারলেই প্রাপক তাকে বকশিশ দিয়ে খুশি করতেন। শুধু চিঠি নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রিয়জনদের পাঠানো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস’র জন্যও ডাক পিয়নের খোঁজ করতে হতো।

অবশ্য ডাক পিয়নও তখন তার দায়িত্ব কর্তব্য যথারীতি পালন করতেন। অনেক সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্খিত চিঠিপত্র, টাকা পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস পৌঁছে দিতেন। এছাড়া ওই সময় যারা প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্টস পাঠাতেন তারা ছুটে যেতেন কাঙ্খিত ডাক বাক্সের কাছে। ঝড়, বৃষ্টি ও রোদকে উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি ডাক বাক্সে পোস্ট করতে পারলে তবেই স্বস্তি। আর তখন ডাক বাক্স গুলোও সব সময় লাল রঙে রাঙিয়ে রাখা হতো। যাতে সহজেই তাতে মানুষের দৃষ্টি পড়ে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় এখন আর প্রিয়জনের কোন খবর জানতে ডাক পিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয়না।

প্রিয়জন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই থাকনা কেন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে তার খবর নেওয়া যায়। আর তার সাথে টাকা পয়সা লেনদেন করতেও এখন আর পোস্ট অফিস বা ডাক পিয়নের প্রয়োজন হয়না। নিমিষের মধ্যে বিকাশ এবং অনলাইনসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে টাকা-পয়সা লেনদেন করা যায়। সে কারণে এখন আর মানুষের কাছে ডাক পিয়নের কদর নেই।

একই কারণে ডাক বাক্স বা পোস্ট অফিসের গুরুত্বও কমে গেছে। বর্তমানে চাকরি বা অফিসিয়াল চিঠিপত্র লেনদেন ছাড়া পোস্ট অফিস বা ডাক বাক্সের প্রয়োজন হয়না। ফলে ডাক পিয়ন ও ডাক বাক্সের গুরুত্ব একদমই কমে গেছে। কোথাও কোথাও ২/১টি ডাক বাক্স চোখে পড়লেও সেটিতে আর কেউ চিঠিপত্র পাঠান না। ফলে ডাক বাক্স গুলো অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলা পোস্ট মাস্টার আফজাল হোসেন বলেন তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এখন আর কেউ ডাক বাক্সের মাধ্যমে তেমন চিঠিপত্র লেনদেন করেন না। কিন্তু তারপরও নিয়মানুযায়ী ডাক পিয়নরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ডাক বাক্স গুলো খুলে থাকেন।

এতকিছুর পরেও সেই ডাক পিয়নের অপেক্ষায় থাকা সময়গুলো অনুভূতিতে নাড়া দেয় প্রায় সকল মধ্যবয়সিদের কাছে। খুবই কম সংখ্যক মানুষই এই ডাক পিয়নের কথা ভুলে গেছেন। আর ভুলে গেলেও বা কি হবে, সেই সর্নালী দিন তো আর ফিরে আসবে না। এমন আফসোসের সুর অনেক মানুষের মুখেই। সেই হতাশা থেকে রেহাই পেতে বর্তমান সরকারের ডাক বিভাগকে নিয়ে গৃহিত সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানা তারা।

spot_img
এই বিভাগের অনান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ