কুড়িগ্রামে আশংকাজনকভাবে বাড়ছে পানিতে ডুবে অপমৃত্যুর সংখ্যা। এক তথ্যে গত দেড় বছরে প্রায় ৭০জনের মৃত্যুর খবর উঠে এসেছে। এদের অধিকাংশই শিশু।বাড়ীর আশেপাশে পুকুর বা ডোবার পানিতে এবং নৌকা ডুবিতে অধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।পরিবারের লোকজনের অবহেলা আর অসচেতনার কারণে এই মৃত্যুর মিছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরকারি একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের ২৬জুলাই পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের ৭০জনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ২০২০ সালে ৪৪জন এবং চলতি বছরের ২৬জুলাই পর্যন্ত ২৬জন এর শিকার হয়েছেন।
২০২০ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে ১জন করে, মার্চ, মে, জুলাই ও ডিসেম্বর মাসে ২জন করে। জুন মাসে ৬জন, আগস্ট মাসে ১১জন, অক্টোবর মাসে ১৩জন এবং নভেম্বর মাসে ৩জনের সলিল সমাধী হয়।
শুধুমাত্র এপ্রিল মাসে কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গেছে একজন করে। এপ্রিল মাসে ২জন, মে ও জুলাই মাসে ৭জন এবং জুন মাসে ৮জন পানিতে ডুবে মারা যায়। তবে মার্চ মাসে কেউ মারা যায়নি।
জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের তাজুল ইসলাম জানান, তার দেড় বছরের কন্যা শিশু বাড়ীর উঠোনে খেলতে গিয়ে সবার অগোচরে ডোবার পানিতে পরে গিয়ে মারা যায়। সন্তানের প্রতি অবহেলার কারণেই এই মৃত্যু বলে তিনি স্বীকার করেন।
সন্তান হারানো এই পিতা জানান, নিজেদের অবোধ সন্তানের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া উচিৎ। বিশেষ করে পানির আশেপাশে থাকলে নিয়েদের তত্ত্বাবধানে রাখা উচিৎ। তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে মনযোগ দেয়া সন্তান হত্যার সামিল হতে হবে।
এছাড়া নাগরিক সমাজের লোকজন জানান, সকল অভিভাবকদের শিশুদের প্রতি খেয়াল ও যত্ন নেয়া উচিৎ। জরুরী কাজ থাকলে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপর কাজে মননিবেশ করা উচিৎ। কখনোই শিশুকে একা ছেড়ে দেয়া উচিৎ হবে না।
বিশেষ করে পুকুর, ডোবা, খাল বা পাত্রে জমানো পানি আছে এমন বস্তুর আশেপাশে শিশুকে একা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। শিশুকে সাঁতার না শিখে পুকুর, ছড়া বা নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বাড়াতে হবে প্রচার প্রচারণা। নাহলে এই মৃত্যু বাড়তেই থাকবে। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, আমাদের কুড়িগ্রাম জেলাটি ভৌগলিকভাবেই নদ-নদী, জলাশয় ও পুকুর-খাল দিয়ে ভরা। এই জনপদের মানুষ তাদের গৃহ-পালিত পশুর প্রতি যতটা যত্নশীল।
ততটা সন্তানের প্রতি নয়। এক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও সরকারি বা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করলেও পানিতে ডুবে শিশুর অপমৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ততটা প্রচার প্রচারণা করে না। এমন অনেক নানা কারণে কুড়িগ্রামে শিশুসহ নানা বয়সিদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারি পরিচালক সাহিদুল ইসলাম জানান, এই জেলায় ১৬টি নদ-নদীর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য বিল-ছড়া, পুকুর ও ডোবা। জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার বেশি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন,
পারিবারিক সচেতনতার অভাব, সাঁতার না জানা এবং সন্তানদের প্রতি দায়িত্ববোধের অভাব। তবে এই বিষয়ে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে বিষয়টি তখনই সফল হবে যখন অভিভাবকরা সন্তানদের প্রতি আরও বেশি সচেতন হবে।