সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও, বাগলী ও বড়ছড়া সীমান্তে রয়েছে ৩টি শুল্কস্টেশন। এই স্টেশন গুলোর মাধ্যমে সরকারকে লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব দিয়ে ভারত থেকে বৈধ পথে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী করে থাকে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেড তৈরি করে উপজেলা বালিয়াঘাট, চারাগাঁও, টেকেরঘাট, চাঁনপুর,
লাউড়গড় ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্ত এলাকা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ মদ, গাঁজা, ইয়াবা, কমলা, বিড়ি, কাঠ, গরু ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। পরে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল থেকে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারীরা। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধের জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় চলছে অভিযান।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গত রবিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী ইয়াবা কালাম ও জিয়াউর রহমান জিয়া ১বস্তা (৫০ কেজি) চোরাই থেকে ১৫০টাকা চাঁদা নিয়ে চোরাকারবারী রতন মহলদার, শরীফ মহলদার, কামরুল মিয়া, তরিকুল ইসলাম, মোক্তার মহলদার, ফেরদৌস মিয়া,
মানিক মহলদার গংকে দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে প্রায় ২০মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে লাকমা গ্রামে মজুত করে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে একাধিক বসতবাড়ির ভিতর থেকে চোরাই কয়লা উদ্ধার করাসহ চোরাকারবারী ছিদ্দু মিয়া ও হেলাল মিয়াকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। এসময় সোর্সসহ অন্য চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়।
এঘটনার প্রেক্ষিতে এএসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত ২ চোরাকারবারীসহ ১১জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এরআগে গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) ভোরে বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী শফিকুল ইসলাম ভৈরব, রমজান মিয়া, ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে বিশিষ্ট চোরাকারবারী খোকন মিয়া,
মানিক মিয়া, একদিল মিয়া, হরমুজ আলী, রহমত আলী, কুদ্দস মিয়া, শহিদুল্লাহ, বাবুল মিয়া, হারুন মিয়া, আজিজ মিয়া, সাজু মিয়া, কাসেম মিয়া, রতন মহলদার, শরীফ মহলদার, কামরুল মিয়া, তরিকুল ইসলাম, ফেরদৌস মিয়া, মোক্তার মহলদার, জয় হোসেন, জাকির হোসেন, জাফর আলী, রুহুল আমিন,
মানিক মহলদারগং ভারত থেকে অবৈধ ভাবে প্রায় ৫০মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে ৫টি নৌকা বোঝাই করে পাটলাই নদী পথে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা নিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী রুহুল আমিন, জাফর আলী, জাকির হোসেন ও জয় হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ৮মেঃটন চোরাই কয়লা বোঝাই ২টি স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকা উদ্ধার করে।
ওই সময় অন্য ৩ নৌকা বোঝাই চোরাই কয়লা নিয়ে অন্যান্যও চোরাকারবারীরা সুকৌশলে পালিয়ে যায়। এঘটনার প্রেক্ষিতে এসআই আবু সিদ্দিক বাদী গ্রেফতারকৃত ৪জনসহ তাদের সহযোগী লালঘাট গুচ্ছগ্রাম গ্রামের বিশিষ্ট চোরাকারবারি খোকন মিয়া, একই গ্রামের মানিক মিয়া ও জামাল মিয়ার নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
তারপরও থেকে নেই চোরাকারবারীরা। পাচাঁরকৃত ১বস্তা (৫০ কেজি) চোরাই কয়লা থেকে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের নামে ১৫০টাকা, চারাগাঁও ক্যাম্পের নামে ১নৌকা (৪ মেঃটন) চোরাই কয়লা থেকে ৫হাজার টাকা ও ২ গডফাদারের নামে ৪০টাকা চাঁদা নেয় সোর্স পরিচয়ধারী জিয়াউর রহমান জিয়া,
ইয়াবা কালাম মিয়া, রমজান মিয়া ও শফিকুল ইসলাম ভৈরব। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি চিরতরে প্রতিরোধের জন্য সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের ২ গডফাদারকে শীগ্রই আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- তাহিরপুরে ৩টি শুল্ক ষ্টেশন থাকার পরও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।