মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাচালান ও মাদক বাণিজ্যসহ জুয়া ও চাঁদাবাজি দিনদিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারতীয় চিনি ও বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র জব্দ করাসহ সীমান্ত
চোরাকারকারী ও জুয়ারীসহ মোট ১০জন গ্রেফতার করছে। আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুরে পৃথক ভাবে গ্রেফতারকৃতদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে- আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট) ভোর ৫টায় জেলার ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার ইউনিয়নের কাইনকোনাম লক্ষণসোম ও কোনাপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩টি রামদা, ১৯২টি বাঁশের লাঠি, ৩২টি লোহার পাইপ,
৫টি ঢাল, ৬টি হেলমেট, ২৩টি বাঁশের টেটা, ১৬৫টি লোহার সুরকি, ৩২টি লোহার কতরা, ৩৮টি লোহার বল্লম উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাচাঁরকৃত ১০ বস্তা চিনিসহ
চোরাকারবারী রমজান মিয়া ও কবির আহমেদকে গ্রেতার করা হয়। কিন্তু তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে চোরাচালান মামলার আসামী কলাগাঁও গ্রামের
রফ মিয়া, সাইফুল মিয়া, জঙ্গলবাড়ি গ্রামের লেংড়া জামাল, হযরত আলী, বাঁশতলা গ্রামের সুলতান মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, লালঘাটের রুবেল মিয়া নিজেদেরকে বিজিবি, পুলিশ, ডিএসবি ও বিএসএফের সোর্স পরিচয় দিয়ে ভারত
থেকে শতশত মেঃটন কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করাসহ হাইকোর্টে নিদের্শ অমান্য করে বাংলা কয়লা ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যায় এবং প্রতিনৌকা কয়লা ও চুনাপাথর (২০-৩০) থেকে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে
৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা চাঁদা নিলেও এব্যাপারে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাত ১০টা এউপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামের সাইফুল ইসলামের বাড়ি সংলগ্ন মুদির দোকানে
অভিযান চালিয়ে জুয়ার আসর থেকে জুয়ারী আব্দুর রাজ্জাক, নজু মিয়া, শুক্কুর আলী, আব্দুর রশিদ, নুর আলম, লিটন মিয়া, মোক্তার হোসেন ও জুয়েল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই সময় জুয়া খেলার সামগ্রীসহ নগদ
৮হাজার ৮শত টাকা জব্দ করা হয়। কিন্তু একাধিক মামলা থাকার পরও সীমান্ত চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারীদেরকে গ্রেফতার করা হয়না। একারণে গত শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা
দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়ার নেতৃত্বে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুয়ায় মাটি চাপা পড়ে
আক্তার হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরআগে গত বুধবার (২ আগস্ট) রাত ২টায় বহুল আলোচিত লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের সময় নৌকা ডুবে আব্দুল হাসিম (৩৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ভোর ৫টায় উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি ও কলাগাঁও এলাকা থেকে ৯টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে বিপুল পরিমান কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করেছে স্থানীয় চোরাকারবারীরা।
এরআগে গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাত ১১টা থেকে বুধবার (৯ আগস্ট) ভোর ৫টায় পর্যন্ত এই সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা ও বিজিবি ক্যাম্পের পূর্বে অবস্থিত সমসারপাড় গ্রাম থেকে মোট ৫২টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে ভারত
থেকে পাচাঁরকৃত অবৈধ চোরাই কয়লা ও হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বাংলা কয়লা নিয়ে গেছে চোরাকারবারীরা। তার আগে গত সোমবার (৭ আগস্ট) রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ভোর ৫টা পর্যন্ত এই সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি
ও কলাগাঁও এলাকা থেকে ৬৮টি নৌকা বোঝাই করে বাংলা ও চোরাই কয়লাসহ চুনাপাথর পাচাঁর করা হয়। কিন্তু এব্যাপারে আইনগত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ছাতক-দোয়ারা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক ও দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান অস্ত্র ও চিনিসহ চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান- আটককৃতদের বিরোদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে।