মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ^ম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সীমান্তের চোরাকারবারী ও তাদের গডফাদাররা যতদিন যাচ্ছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
তারা সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা, পাথর, গাছ, বাঁশ, সুপারি, চাল, চিনি, ছোলা, কমলা, বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, গরু, ঘোড়া ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল পাচাঁর করছে।
পৃথক অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, মাদক ও ভারতীয় রুপীসহ ৮জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ সোমবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ১১টায় আদালতের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন (২৬) নামের এক চোরাকারবারীকে কারাঘারে পাঠিয়েছে পুুুলিশ।
গতকাল রবিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ মালামাল পাচাঁরের পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চোরাকারবারী আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ভারতীয় ৯৯হাজার ৮শত রুপী ও দেশীয় ৬৭হাজার ৫শত টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা তেতুলগাছ, এলসি পয়েন্ট, জঙ্গলবাড়ি, টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনিপকল্প, বড়ছড়া,
রজনীলাইন, বরুঙ্গাছড়া, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোছড়া, রাজাই, কড়ইগড়া, বারেকটিলা ও লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, পুরান লাউড়, মুকশেদপুর ও বীরেন্দ্রনগর এলাকা দিয়ে সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারী ইয়াবা কালাম
মিয়া, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, লেংড়া বাবুল, আনোয়ার মিয়া, কদ্দুস মিয়া, বাবুল মিয়া, শহিদুল্লাহ, কাসেম মিয়া, মানিক মিয়া, একদিল মিয়া, সাজু মিয়া, আজিজ মিয়া, হরমুজ আলী, রহমত আলী, হারুন মিয়া, কামাল মিয়া,
আব্দুল হাকিম ভান্ডরী, জিয়াউর রহমান জিয়া, আবু বক্কর, আলমগীর, জম্মত আলী, রফিকুল ইসলাম, শহিদ মিয়া, এরশাদ মিয়া, জজ মিয়াগং সহ মধ্যনগর, বিশ^ম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সীমান্ত দিয়ে
অন্যান্য চোরাকারবারীরা একই ভাবে সিন্ডিকেডের মাধ্যমে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবাধে কয়লা, পাথর, গাছ, বাঁশ, সুপারি, চাল, চিনি, ছোলা, কমলা, ইয়াবা, মদ, গাঁজা, বিড়ি ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য দিনেদুপুরে পাচাঁর করছে।
গত শনিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সপুার শুভশীষ ধরের নেতৃত্বে পৃথক অভিযান চালিয়ে বন্দুক ও পাইপগানসহ আরশ আলী ও বকুল মিয়া নামের ২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বুধবার (১০ নভেম্বর)
দুপুরে র্যাব অভিযান চালিয়ে ২০কেজি ৪শ গ্রাম গাঁজার চালান ও ১টি প্রাইভেট কারসহ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া ওয়েজখালী গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী আলাল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। এরআগে গত ৫ অক্টোবর দুপুরে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টাস্কফোর্স গঠন করে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরস ইউনিয়নের উত্তর বীর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৮কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ ও তার স্ত্রী মনি আক্তারকে গ্রেফতার করে। গত ২৯ অক্টোবর
সকাল ৮টায় তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার বটতলা গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে চোরাকারবারী শরীফ মিয়াকে ৩লক্ষ ভারতীয় রুপি, ১টি মোটর সাইকেল, ১টি
মোবাইল ও ২টি সিমকার্ডসহ গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে লাউড়গড় সীমান্তে অভিযান চালিয়ে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়গড় গ্রামের রেফাত আলীর ছেলে চোরাকারবারী আলী রাজকে প্রায় ১৯হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় মদের চালানসহ গ্রেফতার করা হয়।
এরআগে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী ইয়াবা কালাম মিয়া ও লিটন মিয়াগংদের পাচাঁরকৃত ভারতীয় ৬৯বোতল মদ ও ৩শ কেজি চোরাই কয়লা উদ্ধার করাসহ চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারী রফিকুল ইসলাম, জম্মত আলী, আলমগীর ও আবু বক্করগংদের পাচাঁরকৃত ভারতীয় ৬টি গরু আটক করা হয়।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজিবি বাদী হয়ে বালিয়াঘাট সীমান্তের ইয়াবা কালাম মিয়া, তার সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী লিটন মিয়া ও পাশর্^বর্তী চানপুর সীমান্তের চোরাকারবারী শাজাহান কবিরকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছে।
কিন্তু চিহ্নিত চোরাকারবারী ও তাদের দুই গডফাদারকে গ্রেফতার না করার কারণে বন্ধ হয়নি চোরাচালান বাণিজ্য। বরং সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত চোরাচালান ও বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে ইতিমধ্যে দুই
গডফাদারসহ অনেক চোরাকারবারী কোটিপতি হয়েগেছে বলে জানাগেছে। তাই সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য বিজিবির পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশসানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি
কামনা করছেন জেলার সচেতন জনসাধারণ। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান সাংবাদিকদের বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান চলছে।